শিরোনাম
সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

কাঁদছে সিলেট সুনামগঞ্জ আর দিরাইবাসী

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে তার নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জসহ সিলেটের সর্বত্র নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনকে নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করা গেলেও সিলেটের রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত তার পরিচিতি ছিল ‘দাদা’ হিসেবে। প্রিয় সেই দাদাকে হারিয়ে সিলেট আজ শোকবিহ্বল। স্বাধীন বাংলাদেশে সাতবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া এই পার্লামেন্টারিয়ান ছিলেন সিলেটের রাজনীতির একজন অভিভাবক। তার মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়— এমনটা মনে করছেন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত একাধারে মন্ত্রী, পার্লামেন্টারিয়ান ও বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম একজন ছিলেন। সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন একজন পরিপূর্ণ রাজনীতিবিদ। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় শূন্যতা সৃষ্টি হবে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গতকাল সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন— মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল, সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আল আজাদ, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত প্রমুখ। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে শোকাহত সিলেট বিএনপির নেতারাও। অভিজ্ঞ এ রাজনীতিকের মৃত্যুতে জাতীয় রাজনীতিতে শূন্যতা সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, ‘সুরঞ্জিতের মতো একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এই মুহূর্তে বাংলাদেশে প্রায় নেই বললেই চলে। তার মৃত্যুতে সিলেটবাসী একজন যোগ্য অভিভাবককে হারাল। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির জীবন্ত ইতিহাস। সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল বলেন, তার প্রয়াণে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে একটি নক্ষত্র খসে পড়ল। তার মৃত্যুতে মুক্তিযোদ্ধা, জাতি ও গণতন্ত্রের বড় ক্ষতি হলো, যা পূরণ হওয়ার নয়।’ ১৯৪৬ সালে সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের দিরাই উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম আনোয়ারপুরে জন্ম নেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। বাম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে অভিষিক্ত হওয়া সুরঞ্জিত আওয়ামী লীগে যোগ দেন নব্বইয়ের দশকে।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি মাসুম হেলাল জানান, তার মৃত্যুর খবর শোনার পর জেলাজুড়ে তার ভক্ত-অনুরক্তরা শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন। গতকাল ভোর থেকে সুরঞ্জিত সেনের দিরাই উপজেলা সদরের বাসভবনে ভিড় করতে থাকেন দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে বাসভবন চত্বর। কেবল দলীয় অনুসারীরা নন, সুরঞ্জিতের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন চৌধুরীও। সুনামগঞ্জ-২ আসনে সুরঞ্জিতের সঙ্গে বারবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন বিএনপির এই নেতা। নাছির চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন একজন বড় মাপের পার্লামেন্টারিয়ান। তার চলে যাওয়ায় সুনামগঞ্জের রাজনীতিতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়। নিজ দলে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান সুরঞ্জিতের প্রতি গভীর শোক জানিয়েছেন। গতকাল দুপুরে সুরঞ্জিতের বাসভবনে উপস্থিত হয়ে স্বজন, নেতা-কর্মীদের সান্ত্বনা দেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন, সেনদা ছিলেন সুনামগঞ্জের একজন ভালোবাসার মানুষ। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই— তা আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না। তার রাজনৈতিক উত্থান হয়েছিল ১৯৭১ সালে। সেই সময় তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে টেকেরঘাট সাবসেক্টর গড়ে ওঠে। তার মতো একজন কাছের মানুষ হারিয়ে আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। সুরঞ্জিতের মৃত্যুতে শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়ুব বখত জগলুল, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান পীর, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক খায়রুল হুদা চপল, যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান সেন্টু, খন্দকার মঞ্জুর, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সুয়েব চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফজলে রাব্বি স্মরণ, সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ। এদিকে আজ সকালে ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জে নিয়ে যাওয়ার পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। বিকালে দিরাইয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

সর্বশেষ খবর