সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রস্তুতি

বাংলাদেশ পাচ্ছে তিন বিলিয়ন ডলার

জুলকার নাইন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের দিনক্ষণ কয়েক দফায় পেছানোর পর এখন আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহকে টার্গেট করে প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা-নয়াদিল্লি। অবশ্য এই তারিখও প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। মার্চের শেষ নাগাদ ও এপ্রিলের শুরুতে দুটি তারিখ দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা। এ নিয়ে চলতি সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে দুই দেশের কর্মকর্তারা বৈঠকে বসবেন। পরে শীর্ষ নেতৃত্বের সম্মতি সাপেক্ষে নতুন সেই তারিখ চূড়ান্ত হতে পারে। অবশ্য তারিখ যেটাই হোক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে শিগগিরই ভারত সফর করবেন সে বিষয়ে আশাবাদী দুই দেশের কর্মকর্তারাই। তাই সফরের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে রাখা হচ্ছে গুরুত্বের সঙ্গেই। ইতিমধ্যে প্রায় ২০ চুক্তির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভারতের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন স্থাপন হতে পারে। অবকাঠামো উন্নয়নের সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশ পেতে পারে নতুন আরও তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ। তবে সেই বহুল আলোচিত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে কোনো আশার আলো দেখা যায়নি এখনো। ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। সূত্রমতে, আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করা হলেও ১৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরের কথা ছিল। শেখ হাসিনার এ সফর হওয়ার কথা ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে। মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে প্রথম সফরের পর তার মেয়াদে এটাই শেখ হাসিনার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ডিসেম্বরের শুরুতে ঢাকার পক্ষ থেকে এ সফর পেছানোর অনুরোধ জানানো হলে তা স্থগিত হয়ে যায়। পরে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে ফেব্রুয়ারিতে সফরের আগ্রহের কথা জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারিতেও দিনক্ষণ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। ঢাকা ও দিল্লির পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জার্মানি, ইন্দোনেশিয়াসহ তিনটি বিশেষ সফরের সূচি থাকলেও এখনো স্থান পায়নি নয়াদিল্লি। একইভাবে ভারতেও ফেব্রুয়ারি-মার্চ জুড়ে বাজেট এবং পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক ব্যস্ততা রয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহকে সুবিধাজনক হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে ঢাকার কূটনৈতিক সূত্র জানায়, সফরের প্রস্তুতি চলছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতামতের পর প্রধানমন্ত্রীর সফরে অন্তত ২০টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও সম্মতিপত্র সইয়ের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। এসবের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার রূপরেখা, ভারত থেকে ঋণচুক্তিতে সমরাস্ত্র কেনাকাটা, মহাকাশ গবেষণা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সীমান্ত হাটের বিষয় রয়েছে। সেই সঙ্গে আছে নতুন এলওসি বা নমনীয় ঋণ সহায়তা। এবার ভারতের কাছে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। চূড়ান্ত হয়েছে ১৬ প্রকল্প। এর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রকল্প ছাড়াও আছে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের তিনটি প্রকল্প। মিরসরাইয়ে ভারতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য ভারত সরকারের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় ঋণে এটি বাস্তবায়নের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। মিরসরাইয়ে ১০০ একর জমির উন্নয়ন কাজের জন্যও প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া পায়রা ও মহেশখালীতে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ভারতীয় ঋণ প্রত্যাশা করা হয়েছে। নতুন ঋণের জন্য প্রকল্প তালিকায় আরও আছে বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প, আশুগঞ্জ-জকিগঞ্জ নৌরুট খনন, পায়রা বন্দরের বহুমুখী টার্মিনাল নির্মাণ, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ডুয়েল গেজ নির্মাণ, স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের আধুনিকায়ন, ঈশ্বরদীতে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণ, বগুড়া-ঝাড়খন্ড (ভারত) ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, মোল্লার হাট ১০০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ, গাজীপুর ৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ, বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-ভাটিয়াপাড়া-বনগাঁও ১৩৫ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত, রামগড়-বাড়িয়ারহাট ৩৫ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ।

সর্বশেষ খবর