মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
আমরি বাংলা ভাষা

আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী প্রচার করতে হবে

হাসনাত আবদুল হাই

আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী প্রচার করতে হবে

মহান ভাষা আন্দোলন ও অমর একুশে আমাদের জীবনে অবিচ্ছেদ্য অংশ। পৃথিবীতে মাতৃভাষার জন্য আমাদের রক্ত দিতে হয়েছে। সুতরাং ভাষাপ্রীতি দেশপ্রেমেরই অংশ। ভাষা আন্দোলন ঘিরে বিশ্বব্যাপী ১৯৯৯ সাল থেকে ভাষার জন্য আমাদের জীবনদানের দিন ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। কিন্তু আমরা আজও সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন করতে পারিনি। এ গ্লানি আমাদের। দেশে অবশ্যই প্রমিত ভাষা ও বানানরীতি থাকা প্রয়োজন। একুশের প্রতিশ্রুতি ছিল ভাষা ও সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক জাগরণের জন্য। এ উদ্দেশ্যে প্রয়োজন ছিল বাংলা চর্চা ও সমৃদ্ধি সাধন। অফিস, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বস্তরে প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যবহার। উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষার ব্যবহার একেবারেই সীমিত, এর মূল কারণ বাংলায় লেখা পাঠ্যপুস্তকের অভাব। এ ব্যাপারে বাংলা একাডেমিকে উদ্যোগ নিতে হবে। সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের জন্য বাংলা ভাষায় গ্রন্থ প্রকাশ করতে হবে। এজন্য জাতীয় সংসদের মাধ্যমে একটি আইন পাস করা যেতে পারে। বাংলা একাডেমির একটি বিশেষজ্ঞ মনিটরিং দল থাকবে। যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে জবাব আদায় করবে। কোনো ত্রুটি থাকলে সংবাদ সম্মেলন করে পত্রিকায় প্রকাশ করবে। ফ্রান্সে একাডেমি অব ফ্রান্সের অনুমতি ছাড়া নতুন কোনো শব্দ জনসাধারণের কাছে ব্যবহার করা যায় না। গণমাধ্যম, বই, পত্রপত্রিকায় নতুন শব্দ ব্যবহার করতে তাদের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এসব নিয়ম মানে না। বিদেশে আমাদের দূতাবাসগুলোয় একটি লাইব্রেরি থাকতে হবে। যেখানে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ বইসহ বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রচনাগুলোর অনুবাদ, তথ্যচিত্র, লিফলেট, পোস্টার ইত্যাদি থাকবে; যা বহির্বিশ্বে বসবাসরত বাঙালিরা পড়ার সুযোগ পাবে। গুরুত্বপূর্ণ দেশ যেমন ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ভারতে আমাদের দূতাবাসের অধীন ‘বাংলাদেশ কালচারাল সেন্টার’ গড়ে তুলতে হবে। ভারত আমাদের দেশে ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের দুটো শাখা চালু করেছে। এখানে অলিয়ঁস ফ্রঁসেস, রুশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, গ্যাটে ইনস্টিটিউট চালু রয়েছে। এমনকি ব্রিটিশ কাউন্সিল বহু বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সেমিনার, প্রকাশনাসহ নানাবিধ সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। অথচ বিশ্বের নানা দেশের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও আমরা দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরতে পারছি না। আমাদের সংস্কৃতি তুলে ধরার জন্য এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান যেমন জরুরি তেমনি গুণগত মানের গবেষণা, সাহিত্যের অনুবাদ ও প্রকাশনা দরকার; যার মাধ্যমে বিদেশিরা আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কে, দেশ ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবে। আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী প্রচার-প্রসার করতে হবে তাহলে আমাদের পরিচয় আরও সমৃদ্ধ হবে।

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাবেক সচিব।

সর্বশেষ খবর