বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

এই সিইসিতে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না : বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাকে নিয়েই আপত্তি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের। গত রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জোটের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে সিইসির অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করা হয়। পরে জোটের পক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘জনমনে কে এম নুরুল হুদা সম্পর্কে নেতিবাচক উপলব্ধি সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি সার্চ কমিটি ও রাষ্ট্রপতির বিবেচনায় না নেওয়া খুবই রহস্যজনক। এমন একজন বিতর্কিত সাবেক সরকারি কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত কোনো প্রতিষ্ঠান নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। কাজেই এই সিইসির নেতৃত্বে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে না।’ বৈঠকসূত্রে জানা যায়, সিইসির বিরুদ্ধে বিএনপি জোট জনমত তৈরির চেষ্টা করবে। অন্য নির্বাচন কমিশনারদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করবে। তবে এ নিয়ে আপাতত কোনো কর্মসূচিতে যাবে না ২০ দল। বৈঠকে মির্জা ফখরুল ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খানসহ জোটের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল জানান, তাদের দেওয়া তালিকা থেকে মাহবুব তালুকদারকে রাখা হয়েছে। নুরুল হুদা প্রসঙ্গে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত নুরুল হুদা যুগ্মসচিব হিসেবে চাকরিজীবন শেষ করেন। অতিরিক্ত সচিব এবং সচিব হয়েছেন শুধুই কাগজে। প্রকৃতপক্ষে তিনি এক দিনের জন্যও অতিরিক্ত সচিব কিংবা সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেননি। ফলে এসব পদে দায়িত্ব পালনের কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা তার নেই। অভিজ্ঞ সচিব ছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এ ঘটনা অভূতপূর্ব। রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়া এমন হওয়ার কথা নয়।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের যাত্রা শুরুতে আস্থার সংকট ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যার জন্ম দিতে পারে। অভিযোগ আছে, তিনি ১৯৯৬ সালে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক হিসেবে বিএনপি সরকারবিরোধী জনতার মঞ্চের একজন সংগঠক ছিলেন। অথচ কর্মরত সরকারি কর্মকর্তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারেন না। এমন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া সরকারি চাকরিবিধির নিদারুণ লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের পর নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আমাদের প্রস্তাবের যৌক্তিকতা আরও দৃঢ় হয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শেষ মুহূর্তে দ্রুততার সঙ্গে সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত ১০ নাম থেকে একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজনকে নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সব মহল থেকে দাবি ছিল, সার্চ কমিটির বাছাই করা এই ১০ জনের নাম জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। তাদের জীবনবৃত্তান্ত ও কর্ম অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা হবে। এ পন্থা অনুসরণ করা হলে প্রক্রিয়াটি কিছুটা হলেও স্বচ্ছতা পেত। কিন্তু তা করা হয়নি। আমরা নিরাশ ও হতাশ হয়েছি।’

তিনি বলেন, “দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। এসব সন্দেহের মধ্যেও একটি বড় সন্দেহ হলো কাদের নির্বাচন কমিশনে রাখা হবে তা ছিল শাসক মহলের পূর্বপরিকল্পিত। ‘রাষ্ট্রপতি যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেই সিদ্ধান্তই আমরা মেনে নেব’— এ বক্তব্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আসলে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন। সাংবিধানিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া অন্য সব বিষয়ে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করতে বাধ্য। এ কারণেই আমরা মনে করতে পারি বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দেরই প্রতিফলন ঘটেছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দল সম্পর্কে তার মনে ক্ষোভ থাকতে পারে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ শাসনামলে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়ে তিনি আওয়ামী লীগের প্রতি অনুরাগ পোষণ করতে পারেন। এ দুই বিপরীত পরিস্থিতির মধ্যে তিনি কতটুকু নিরপেক্ষতা অবলম্বন করবেন সে ব্যাপারে জনমনে যৌক্তিক প্রশ্ন রয়েছে। অন্যদিকে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড নামের সরকারি একটি প্রজেক্টের এমডি হিসেবে সরকারের লাভজনক পদে কাজ করেছেন।’

সর্বশেষ খবর