বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ধানের শীষ না স্বতন্ত্র ভাবনায় জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য পথ খুঁজছে জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচন কমিশনে জামায়াত নিবন্ধন হারিয়েছে আগেই। সম্প্রতি দলের নির্বাচনী প্রতীক দাঁড়িপাল্লাও হাতছাড়া হয়ে গেল। দুটো সিদ্ধান্তই এসেছে উচ্চ আদালত থেকে। দলগতভাবে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ না থাকায় এখন কোন পথে যাবেন সে ভাবনায় তাড়িত দলটির নেতারা। নির্বাচনমুখী  দলটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে, না জোটপ্রধান বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে, নাকি অন্য কোনোভাবে অংশ নেবে এ নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা পথ খুঁজছেন। সূত্র জানায়, নতুন নামে ও নতুন প্রতীক নিয়ে দলীয়ভাবেই নির্বাচন করার প্রস্তাব উঠেছে। কারণ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকায় জামায়াতে ইসলামী নামে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। নতুন নামে সংশোধিত নীতি ও নতুন প্রতীক নিয়ে রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকেয়ে রাখার প্রস্তাব শীর্ষ পর্যায়ের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। দ্বিতীয় বিকল্প হচ্ছে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন করা। জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয়টি এখনো উচ্চ আদালতে বিবেচনাধীন বিধায় আইন ও আদালতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে যে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলাম। আর দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার আইনি ও নৈতিক অধিকার এ সরকারের নেই।’ তিনি বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে আমাদের দেশে কখনো কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। একই কারণে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন এ দেশের কোনো বিরোধী দল অংশগ্রহণ করেনি এবং জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলনে আছি এবং এটি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী প্রস্তুতি রয়েছে। জামায়াতের নির্বাচনের জন্য আলাদা কোনো প্রস্তুতি নিতে হয় না।’ জানা যায়, আগামী সংসদ নির্বাচনে জামায়াত অংশ নিতে চায়। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠকে জামায়াতের নেতারা ৫০টি আসন চেয়েছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে জামায়াতকে ১৫টির বেশি আসনে ছাড় দেওয়া অত্যন্ত কঠিন হবে বলে জানানো হয়। জামায়াত যতসংখ্যক আসন চেয়েছে তা পরীক্ষা করে দেখার কথা বলা হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে। জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা প্রতীক না থাকায় বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে দলের অনেকেই আগ্রহী নন। দরকষাকষি করে অধিকসংখ্যক আসন বিএনপির কাছ থেকে নেওয়া যদি সম্ভবও হয়, রাজনৈতিকভাবে জামায়াতের লোকসানের পাল্লাই ভারী হবে। জানা যায়, জামায়াতে ইসলামী এখন ঠিকানাবিহীন। এ অবস্থায় রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে প্রশাসনিক নির্দেশে নিষিদ্ধ করার তাগিদ বোধ করছে না সরকার। স্থানীয় সরক?ার ও জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনেই দলগতভাবে জামায়াত প্রার্থী দিতে পারবে না। তাদের স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে হবে। আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তারা নবতর কর্মকৌশল নিচ্ছে। জানা যায়, সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় থেকে তারা চলার চেষ্টা করে আসছেন। সরকারকে বিপদে বা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে এমন কোনো কর্মকাণ্ড তারা চালায়নি। সন্ত্রাস, জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের লোকজন জড়িত বলে সরকারের মহল থেকে অভিযোগ করা হলেও তারা বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির কথা তারা প্রকাশ্যে বলছে। কিন্তু তাদের এ দাবির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সরকারি মহলে প্রশ্ন রয়েছে। সন্ত্রাসী তৎপরতায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে জামায়াত-শিবিরের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে। ঢাকায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস বছরের পর বছর তালাবদ্ধ। জেলা, উপজেলা অফিসও বন্ধ। নেতা-কর্মীরা অফিসে ঢোকার সাহসই পান না। ঘরোয়া বৈঠক করাও ঝুঁকিপূর্ণ। জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে, আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর জামায়াত নেতৃত্বশূন্য। নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণে নতুন আমির ও জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত করা হয়েছে।

নবনির্বাচিত আমিরের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ?অবস্থায় সরকারের দিক থেকে কোনো রকম সহানুভূতি পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে নতুন পথ স্থির করতে যাচ্ছে দলটি।

সর্বশেষ খবর