বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

কবিতা খানমের বেড়ে ওঠা নওগাঁয়

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

কবিতা খানমের বেড়ে ওঠা নওগাঁয়

দেশের প্রথম নারী নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হওয়ার গৌরব এই সেদিন যাকে স্পর্শ করল সেই কবিতা খানম বেড়ে উঠেছেন নওগাঁর মাটি আর আলো-হাওয়ায়। তার বাড়ি নওগাঁয়, জন্মও এখানেই। তিনি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মরহুম বজলুল হকের মেয়ে। এইচএসসি পর্যন্ত নওগাঁতেই পড়েছেন। এরপর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য গেছেন রাজশাহীতে। প্রতিবেশীরা জানান, কবিতা ছোটবেলা থেকেই গান আর সাহিত্যের অনুরাগী।

কবিতার জন্ম ১৯৫৭ সালের ৩০ জুন নওগাঁ শহরের উকিলপাড়ায়, সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। তার বাবা বজলুল হক ২৫ বছর ছিলেন নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী বিএমসি কলেজের অধ্যক্ষ। ১৯৯৭ সালে তিনি মারা যান। বজলুল হকের চার ছেলে চার মেয়ে। সন্তানদের মধ্যে কবিতা হলেন ৭ম। সবার বড় বখতিয়ার মোসতাহিদ সোবহানী প্রকৌশলী, তিনি এখন আমেরিকা প্রবাসী। এরপর ফরিদা বেগম নওগাঁ সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন, এখন অবসর জীবন যাপন করছেন। তৃতীয় হেলাল মোসতাহিদ সোবহানী বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে ব্যবসায়ী, সেখানে সপরিবারে বসবাস করছেন। চতুর্থ কুররাতুল আইন সম্প্রতি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে অবসর নিয়েছেন। পঞ্চম শিহাব মোতাব্বির সোবহানী সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মরত। ষষ্ঠ ফৌজিয়া খানম পেশায় গাইনি চিকিৎসক। সপ্তম কবিতা খানম ২০১৫ সালের জুনে রাজশাহীর জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন। অষ্টম তারিক মোসতাহিদ সোবহানী সেনাবাহিনীর মেজর।

কবিতা খানমেরর ভাবী শিহাব মোতাব্বির সোবহানীর স্ত্রী নাঈমা বলেন, কবিতা ১৯৭২ সালে নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং একই শহরে তার পিতার কলেজ বিএমসি থেকে ১৯৭৪ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৮১ সালে। ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তিনি ১৯৮৩ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৪ সালে বিসিএসের বিশেষ ব্যাচের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রাজশাহীতে মুনসেফ পদে যোগ দেন। এভাবেই কর্মজীবন শুরু। তিনি বগুড়া, টাঙ্গাইল ও কুষ্টিয়ার বিভিন্ন আদালতে বিচারক ছিলেন। ১৯৯৪ সালে যুগ্ম জেলা জজ পদে উন্নীত হয়ে ঝিনাইদহ ও পাবনা জেলায় কাজ করেন। ২০০০ সালে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদে উন্নীত হন। এ সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা ও খুলনায় দায়িত্ব পালন করেন। খুলনায় থাকতেই ২০০৬ সালে তিনি জেলা ও দায়রা জজ নিযুক্ত হন। তাকে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তাকে বিচারক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ২০০৯ সাল পর্যন্ত রাজশাহী লেবার কোর্টের চেয়ারম্যানের পদে ছিলেন। পরবর্তীতে ওই সালেই তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা দায়রা জজ হিসেবে বদলি করা হয়। তিনি সেখানে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে আবারও তাকে রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে বদলি করা হয়। সেখানে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৬ সালের ৩০ জুন তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তার স্বামী মশিউর রহমান চৌধুরীও জেলা ও দায়রা জজ ছিলেন। জেলা জজ থাকতেই ২০১১ সালে তিনি মারা যান। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে চৌধুরী আবিদ রহমান রুয়েট থেকে লেখাপড়া শেষে এখন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন। মেয়ে ডা. মুমতাহিনাহ্ ঢাকায় একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের লেকচারার। শিক্ষা জীবনের বড়ভাই (সিনিয়র) নওগাঁ সরকারি ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান বলেন, কবিতা ছিলেন খুবই মেধাবী। তিনি সংস্কৃতিমনা। সাহিত্য ও গানে ছিল তার বেশ দখল।

এ বিষয়ে জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, কবিতাদের পুরো পরিবারই উচ্চ শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনস্ক। মহল্লায় তাদের বেশ সুনাম। ১৯৫০, ’৬০ ও ’৭০ দশকে নওগাঁ শহরের অধিকাংশ শিক্ষিত নারী-পুরুষেরই শিক্ষক ছিলেন কবিতার বাবা বজলুল হক।

সর্বশেষ খবর