শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
সবার চোখ নতুন ইসির দিকে

স্বাধীনভাবে কাজ করতে সহযোগিতা দেবে সরকার

রফিকুল ইসলাম রনি

নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়ে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির আপত্তি থাকলেও এ কমিশনের অধীনেই আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করে সরকার। সরকারের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় বর্তমান সরকার। এ জন্য কমিশনকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। তারা আরও জানান, বিগত দশম সংসদ নির্বাচনের মতোই আগামী ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ও রুটিনমাফিক দৈনন্দিন কাজ করবে। এ জন্য একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। তার আলোকেই নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবে। অতীতের মতো আগামীতেও নির্বাচনকালীন সরকার নির্বাচন কমিশনের কাজে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না। দলীয় সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহায়তা করতে ইতিমধ্যে প্রণীত নির্বাচনকালীন সরকারের কাজকর্মের রূপরেখা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়েছে। ১১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলের ১৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের সময় রূপরেখার একটি কপি তার কাছে হস্তান্তর করে। ইসির সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গ নিয়েও কথা হয় বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে তা বানচালের চেষ্টা করে বিএনপি। ওই নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দল (মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী) নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন। বিএনপিকে স্বরাষ্ট্রসহ তাদের চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো মন্ত্রণালয় দেওয়ার প্রস্তাবও করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বিএনপি সে প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যায়। তবে তাদের আন্দোলন ব্যর্থ হয়। এদিকে বিগত তিন বছরের নানা ঘটনাপ্রবাহের পর বিএনপি এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসেছে। এখন তারা শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন এবং তাকে সহায়তা করার জন্য ‘সহায়ক সরকার’-এর কথা বলছে। এ সহায়ক সরকার কেমন হবে সে বিষয়ে শিগগির রূপরেখা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এদিকে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। তাদের অভিযোগ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ‘জনতার মঞ্চের’ লোক। দশম সংসদ নির্বাচনের মতো আগামীতেও নীলনকশার নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় আসতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনকে যে এজেন্ডা দেবে, কমিশন তা বাস্তবায়ন করবে। তবে বিএনপির এ ধারণা অমূলক মনে করে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে বিশ্বাসী। অবাধ, সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। এদিকে গতকাল সকালে সচিবালয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের সঙ্গে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি জাতিকে আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ভূমিকা পালনে সব ধরনের সহযোগিতা দেব।’ তিনি বলেন, ‘আমরাও চাই এ সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জে যে সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনও তার মতো সবার কাছে সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য হোক।’ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দিয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার কোনো মেজর পলিসি বা ডিসিশন (গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত) নেবে না এবং কোনো গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নেবে না। কেবল দৈনন্দিন কাজ করবে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্রের স্বার্থে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকারি দলের পক্ষ থেকে আমরা এ প্রস্তাব করেছি।’ গতকাল এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে নতুন নির্বাচন কমিশনকে চাপের মধ্যে রাখতে চায়। সে উদ্দেশ্যেই তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জনতার মঞ্চের লোক বানাতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাজে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা হবে না। নির্বাচন কমিশনের কাজ হচ্ছে আইন অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করা।

তাদের সামনে যে আইনের বই থাকবে, সে মোতাবেক তারা নির্বাচন পরিচালনা করবে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে বিশ্বাসী। অতীতেও আওয়ামী লীগ ভোট ডাকাতি করে বা জাল-জালিয়াতি করে ক্ষমতায় আসেনি। আগামীতেও আসবে না। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করবে। তিনি বলেন, এ সরকারের আমলেই পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন।

সর্বশেষ খবর