শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
সবার চোখ নতুন ইসির দিকে

চাপে রেখে দাবি আদায়ের কৌশলে থাকবে বিএনপি

মাহমুদ আজহার

নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনকে ‘চাপে’ রেখে দাবি আদায়ের কৌশলে থাকবে বিএনপি। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করতে সারা দেশে জনমত তৈরির চেষ্টা করবে। একইভাবে কূটনৈতিক মহলেও দলটি বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করছে, নতুন নির্বাচন কমিশন দলনিরপেক্ষ হয়নি। তাদের অতীত কর্মকাণ্ডও তুলে ধরা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট মহলে। জানা গেছে, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন কমিশনের অভিযোগ এনে এ ব্যাপারে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানিয়ে সরকারে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি।

দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, কমিশনকে মেনে না নিলেও নিয়োগ হয়েছে এটা সত্য। এটা হুটহাট করেই বদল করা যাবে না। তাই সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হবে। বিশেষ করে সিইসির কর্মকাণ্ডকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। তাদের দু-একটি নির্বাচন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সময়ও দেওয়া হবে। যদি সেখানে তারা নিরপেক্ষতা প্রমাণে ব্যর্থ হন, তাহলে বিষয়টি নিয়ে রাজপথে যাওয়ার সুযোগ হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারের রাজনৈতিক আনুগত্য নিয়ে যেমন সমস্যা আছে, তেমনি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করার মতো যোগ্যতারও অভাব রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমন জটিল ও নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে মানুষের ধারণাও যেমন বিরূপ, তাতে এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তির নিয়োগ রহস্যজনক বলেই আমরা মনে করছি।’ নতুন সিইসি নুরুল হুদার অধীনে জাতীয় নির্বাচন বর্জন করবেন কিনা— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার প্রশ্নই তো এখন আসছে না। নির্বাচন যখন আসবে, তখন পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ বিএনপি নেতারা বলছেন, সবার অংশীদারিত্বে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য শুধু নির্বাচন কমিশনই যথেষ্ট নয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও দলনিরপেক্ষ থাকতে হবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে শিগগিরই নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক’ সরকারের রূপরেখা দেবে বিএনপি। এ নিয়ে দল সমর্থিত ‘থিঙ্কট্যাঙ্করা’ কাজ করছেন। তা এখন অনেকটা শেষ পর্যায়ে। এরপর তা দলীয় নীতিনির্ধারক ফোরামে তুলে সংবাদ সম্মেলন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানেই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা স্পষ্ট করা হবে। তা নিয়ে দেশি-বিদেশি জনমতও তৈরি করা হবে। সূত্রমতে, নির্বাচন কমিশন নিয়োগের পর ওই রাতেই দলের স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বেগম জিয়া। ওই বৈঠকে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, সিইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও নতুন নির্বাচন কমিশন মন্দের ভালো। তাই এ নিয়ে মাঝামাঝি অবস্থানে থাকতে হবে। সিইসির অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। কমিশনের সদস্যদের চাপে রাখতে তাদের গতিবিধিও পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর বেগম জিয়া বিষয়টি নিয়ে পরদিন বৈঠক করেন ২০-দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে। সেখানেও নির্বাচন কমিশন নিয়ে কৌশলী ভূমিকা নেওয়ার কথা বলা হয়। তবে তাদের কার্যক্রমে নিরপেক্ষতা হারালে তত্ক্ষণাৎ এ ব্যাপারে রাজপথের কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সিইসি নিয়োগের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার পরও আমরা নতুন কমিশনের কিছু কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করব। ছোট ছোট কিছু নির্বাচন আছে সামনে। এগুলো দেখব। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার। সে বিষয়টিও আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এ নিয়ে আমাদের চেয়ারপারসন শিগগিরই একটি রূপরেখা দেবেন।

সংশ্লিষ্টরা কাজও করছেন।’ দলের স্থায়ী কমিটির আরেক প্রবীণ সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা যেমন সিইসি নিয়োগে আপত্তি জানিয়েছি, তেমনই তাদের কর্মকাণ্ডও পর্যবেক্ষণ করব। তাদের ভূমিকা কী হয়, তা কিছু দিন দেখতে হবে। তবে এও মনে রাখতে হবে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু কমিশনের ওপরই নির্ভর করে না। নির্বাচনকালীন সরকারে কে থাকেন, তাও গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সহায়ক সরকারের রূপরেখা আমরা দেব। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কোনোভাবেই সুষ্ঠু হতে পারে না।’ জানা গেছে, বিএনপি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সহায়ক সরকারকে। এ দাবিতেই রাজপথ সরগরম করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। দলটি মনে করছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোনোভাবেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই অন্তর্বর্তীকালীন একটি সহায়ক সরকার জরুরি। যারা সব ক্ষেত্রেই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন হলে প্রশাসনকে কোনোভাবেই নিরপেক্ষ করা যাবে না।

দলের সিনিয়র এক নেতা বলেন, ‘সিইসির কথা একটি থানার ওসিও শোনেন না। তারা শোনেন এমপি বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কথা। সুতরাং সিইসি যত নিরপেক্ষ নির্বাচনের চেষ্টাই করুন না কেন, সহায়ক সরকারের প্রধান যদি দলনিরপেক্ষ না হন, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনই আশা করা যায় না। এজন্য আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থায় পরিবর্তন। ক্ষমতাসীন সরকারেরও ভয় সেখানেই। তাই তারাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে।’

সর্বশেষ খবর