শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

আপিল আদালতেও ট্রাম্পের বিপক্ষে রায়

প্রতিদিন ডেস্ক

আপিল আদালতেও ট্রাম্পের বিপক্ষে রায়

আপিলেও হেরে গেলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার আইনজীবীরা। নবম সার্কিট আপিল কোর্টও তার নির্বাহী  আদেশ বাতিল করে দিল। ফলে সাত মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আর কোনো বাধা থাকল না। ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সানফ্রান্সিসকোয় অবস্থিত নাইন্থ সার্কিট আপিল  আদালতের তিন বিচারক বৃহস্পতিবার ঐকমত্যে পৌঁছেন, ট্রাম্প তার ওই নির্বাহী আদেশে ধর্মীয় বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন, যা যুক্তরাষ্ট্র সংবিধানের পরিপন্থী। এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এখন সুপ্রিম কোর্টে যেতে হবে অথবা ওই আদেশ পরিবর্তন করে নতুন নির্বাহী আদেশ জারি করতে হবে। বিচারকরা বলেছেন, সরকারপক্ষ নির্বাহী আদেশটি জরুরিভাবে কার্যকরের কোনো অপরিহার্যতা আদালতে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আদালত আরও বলে, প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের একটি অংশ স্থগিত করে নিম্ন আদালত যে আদেশ দিয়েছে, আপিল আদালত তা বহাল রাখছে। এদিকে ওয়াশিংটন রাজ্য গভর্নর ডেমোক্র্যাট জে ইন্সলি প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘মি. প্রেসিডেন্ট! আপনাকে আমরা আদালতে এর মধ্যেই দেখেছি এবং আমরা আপনাকে আদালতে পরাজিত করতে পেরেছি।’

তবে এ আদেশে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ট্রাম্প। এক টুইটে তিনি বলেছেন, এর সঙ্গে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত এবং বিষয়টি তিনি আদালতেই দেখবেন। আদালতের ওই আদেশকে ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ আখ?্যায়িত করে পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরাই শেষ পর্যন্ত এ মামলা জিতব।’

এর আগে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১৪ সালে একটি নির্বাহী আদেশে শিশুকালে মা-বাবার সঙ্গে যারা যুত্তরাষ্ট্রে এসেছে, কিন্তু তাদের মধ্যে যারা অভিবাসনের মর্যাদা লাভ করেনি, তেমন অনূর্ধ্ব ৩০ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের ওয়ার্ক পারমিট প্রদান এবং নানা শর্তে অভিবাসনের মর্যাদা দিতে চেয়েছিলেন। ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে টেক্সাস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করেন রিপাবলিকানরা। সেই আদালতও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ওবামার ওই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে। এরপর ওবামার আইনমন্ত্রীসহ বিচার বিভাগ একইভাবে আপিল করেছিলেন। ফেডারেল কোর্টের রায়ই বহাল ছিল। এরপর তারা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও ফায়দা পাননি। এবারও ট্রাম্পকে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের পর শুনানির তারিখ পেতেই ৯০ দিন পার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ট্রাম্প ২৭ জানুয়ারি জারি নির্বাহী আদেশে সাত মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকদের ভিসা ৯০ দিন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। এ ৯০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্পের মনোনয়নপ্রাপ্ত বিচারপতি নিয়োগ পাবেন বলে কেউই মনে করছেন না। সুপ্রিম কোর্টে বর্তমানে আট বিচারপতির মধ্যে চারজন রিপাবলিকান, আর চারজন ডেমোক্রেট। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে লড়ছেন ডেমোক্রেটরা। ওয়াশিংটন, মিনেসোটাসহ ১৬ অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেটরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন আইনগত লড়াইয়ে। পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নসহ বেশ কটি মানবাধিকার সংস্থা। নিউইয়র্কে জে এফ কে এয়ারপোর্টে লাগাতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ‘নিউইয়র্ক ইমিগ্রেশন কোয়ালিশনের’ কর্মকর্তারাও এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশি আমেরিকানদের অন্যতম সংগঠক মোহাম্মদ এন মজুমদার তাত্ক্ষণিক এক বার্তায় বলেছেন, ‘এর মধ্য দিয়ে জনতার মতামতের প্রতিফলন ঘটল, সত্যের জয় হলো।’ বাংলাদেশি আমেরিকান ডেমোক্রেটিক লীগের সভাপতি খোরশেদ খন্দকার, ডেমোক্রেটিক পার্টির সংগঠক ওসমান চৌধুরী বলেছেন, ‘এভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে আইনের শাসন সুসংহত রয়েছে।’ ট্রাম্পের এই নির্দেশ জারির পর অর্থাৎ ২৯ জানুয়ারি শুক্রবার থেকেই সারা আমেরিকায় তুমুল প্রতিবাদ শুরু হয়। এয়ারপোর্ট, ফেডারেল ভবন এবং গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানে বিক্ষোভের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও রাস্তায় নামে। সিয়াটল ফেডারেল কোর্টের স্থগিতাদেশ দেওয়ার আগ পর্যন্ত পাঁচ দিনে প্রায় এক লাখ ভিসা বাতিল করা হয়েছিল। স্থগিতাদেশ প্রদানের পরই ওই সাত মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রের ভিসাগুলো আবার সক্রিয় করা হয়। সবাই যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেও পড়েছেন। এনআরবি নিউজ।

সর্বশেষ খবর