সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
পজেটিভ বাংলাদেশ

চাষের জমি পাচ্ছে দুই লাখ ভূমিহীন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

দেশের ২ লাখ ১০ হাজার ভূমিহীনকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। বসবাসের উপযোগী চরাঞ্চলে হবে এদের জায়গা। সেখানে তাদের চাষাবাদের জন্য দেওয়া হবে খাসজমি। পরিবারের জন্য তৈরি হবে আবাসস্থল। আয় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও নেওয়া হবে নানা উদ্যোগ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য প্রকল্পটির মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হচ্ছে। এ বছরের জুনে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর সভাপতিত্বে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত সেন্ট্রাল স্টিয়ারিং কমিটির সভা হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই সভার কার্যবিবরণীতে এসব উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত উল্লেখ করা হয়েছে। কার্যবিবরণীতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে মধ্য আয়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে দারিদ্র্য বিমোচনের পদক্ষেপ হিসেবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে সব গৃহহীনকে আবাসন সুবিধা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভূমিহীন, গৃহহীন-ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসন করা। কাজেই ভূমিহীন মানুষকে পুনর্বাসনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত খাসজমি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কিছু চর রয়েছে, যেখানে শত শত ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার বসবাস করে এবং চরগুলো স্থায়ী প্রকৃতির। এসব চরে ব্যারাক নির্মাণ করে পরিবার পুনর্বাসন এবং তাদের কর্মসংস্থান ও আয়ের পথ সৃষ্টির লক্ষ্যে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। জবাবে কামাল আবদুল নাসের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বিভাগীয় কমিশনারদের তৎপর হতে হবে। বিভাগীয় কমিশনাররা জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সঙ্গে সভা করে প্রতিটি জেলা/উপজেলার জন্য প্রকল্প গ্রহণের তালিকাসহ একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প কার্যালয়কে অবহিত করবেন। তিনি সমতল অঞ্চলে ১৫ এবং চরাঞ্চলে ২৫ শতাংশ হারে প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো যাবে বলে উল্লেখ করেন। সভায় নেওয়া অন্য সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে— পুরনো আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মিত আবাসন বসবাসের যোগ্য করতে সংস্কার ও মেরামত করা হবে; আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটাতে সংশোধিত প্রকল্পে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে হবে; সুবিধাভোগী পরিবার কর্তৃক উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য পাইলটিং হিসেবে একটি জেলায় বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে; আশ্রয়ণ প্রকল্পের সমবায় সমিতি ও ঋণ কার্যক্রম পরিচালনায় গতি আনার পাশাপাশি সঞ্চয় বৃদ্ধি ও ঋণ কার্যক্রম জোরদারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে; স্যাটেলাইট ক্লিনিক স্থাপন করে উপকারভোগীদের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার সব সুযোগ নিশ্চিত করতে বাস্তবায়িত আশ্রয়ণ প্রকল্পের তালিকা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে; যে এলাকায় ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন কার্যক্রম চলমান আছে, সেখানে এ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের ঘর করে দেওয়া যেতে পারে এবং প্রকল্প গ্রহণ করলে উপকারভোগীদের তালিকা অবশ্যই প্রকল্প প্রস্তাবের সঙ্গে পাঠাতে হবে। এ ছাড়া কোনো এলাকায় প্রকল্প নির্মাণ চলমান থাকলে তা শেষ করে পরিবার পুনর্বাসন করা ছাড়া ওই এলাকায় নতুন কোনো প্রকল্প নেওয়া যাবে না। প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার জেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হওয়ায় বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই এলাকা পরিদর্শনে যান। তিনি মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন এবং গৃহহীন পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনে তাত্ক্ষণিক নির্দেশ দেন। সেই থেকে তিনটি ফেইজে এ প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১ লাখ ৪৩ হাজার ২২৩টি পরিবার পুনর্বাসন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর