মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ড. ইউনূসের বিদেশে পাঠানো অর্থের খোঁজে এনবিআর

নিজস্ব প্রতিবেদক

ড. ইউনূসের বিদেশে পাঠানো অর্থের খোঁজে এনবিআর

শান্তিতে  নোবেলজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকসহ ১৯টি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিতভাবে বিদেশে তহবিল স্থানান্তরের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরই অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস, গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ সেন্টারের দান গৃহীত তিনটি প্রতিষ্ঠান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট ও ইউনূস সেন্টারের ব্যাংক হিসাব তলব করে চিঠি দিয়েছে এনবিআর। প্রতিষ্ঠানটি প্রাপ্ত হিসাব বিবরণী আয়কর বিবরণীর সঙ্গে মিলিয়ে পর্যালোচনার কাজ শুরু করেছে বলেও জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রফেসর ইউনূস ২০১১-১২ থেকে ২০১৩-১৪ করবর্ষে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট ও ইউনূস সেন্টার সর্বমোট ৭৭ কোটি ৩৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দান গ্রহণ করেছেন।

আয়কর বিভাগ দানকর আইন, ১৯৯০-এর ১০ ধারা অনুযায়ী তার উপরোক্ত দানের বিপরীতে সর্বমোট ১৫ কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ৮০০ টাকা কর ধার্য করে এবং দাবিকৃত দানকর যথাসময়ে পরিশোধ না করায় আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ৩৭ ধারা অনুযায়ী তার ওপর ৬৯ লাখ ২৬ হাজার ২৫৬ টাকা জরিমানা আরোপ করা হয়।

সূত্রগুলো আরও জানায়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে বিপুল পরিমাণ অর্থ দান করেছেন। ওই দানকৃত অর্থ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মুহাম্মদ ইউনূস তার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ আমেরিকা থেকে ২ লাখ ৫৫ ডলার ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে দান করেছেন। গ্রামীণ আমেরিকা নামে প্রতিষ্ঠানটি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। গ্রামীণ আমেরিকার শেয়ার বা বিনিয়োগ তার আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেননি।

জানা গেছে, কারিগরি সহায়তা ও উপার্জনক্ষম কর্মকাণ্ডের মধ্যে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণ, ইউএসএআইডি, বিশ্বব্যাংক, নেদারল্যান্ডস, গ্রামীণ হেলথ প্রোগ্রামে ৪ দশমিক ৩৭ কোটি টাকার তহবিল নিয়ে গ্রামীণ ট্রাস্ট ১৯৯৬-৯৭ করবর্ষে কার্যক্রম শুরু করে। গ্রামীণ ট্রাস্ট কার্যক্রম শুরুর পর প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯-১০, ২০১০-১১ করবর্ষে যথাক্রমে ৫ দশমিক ৬৮ কোটি ও ১৫ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা অনুদান গ্রহণ করে। দানকৃত অর্থ আয়কর বিবরণী ও অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৬-৯৭ থেকে ২০১৫-১৬ করবর্ষ মেয়াদে এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকাসহ মোট ৩৮টি দেশে সর্বমোট ৪৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করেছে।

সূত্র জানায়, ২০১৫-১৬ করবর্ষে ওই ঋণের স্থিতি ছিল ৪ দশমিক ৯৮ কোটি টাকা। আলোচ্য ঋণের টাকা বিদেশে ঋণ প্রেরণের পদ্ধতি এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের অনুমতিসংক্রান্ত কোনো প্রমাণ আয়কর নথিতে উল্লেখ নেই। সূত্রগুলোর দাবি, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রফেসর ইউনূসের আয়কর রেকর্ড পরিষ্কার নয়। খ্যাতিমান ব্যক্তি হয়ে দেশের টাকা বিদেশে প্রেরণে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিগত এক দশকে তিনি যে পরিমাণ আয়ের ওপর কর প্রদান করেছেন, করমুক্ত আয় হিসেবে দাবি করেছেন তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। সম্পদ ও প্রকৃত আয় গোপন করার ক্ষেত্রেও তিনি সিদ্ধহস্ত। জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেও বিষয়টি উঠে এসেছে। গত ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এ বিষয়ে বক্তব্য দেন। পরদিন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ড. ইউনূস কর্তৃক কর সুবিধা অপব্যবহারের বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে গণমাধ্যমকে অবহিত করেন। এ বিষয়ে এনবিআরের একটি অনুসন্ধানরত সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও কর ফাঁকির বিষয়ে তদন্ত চলছে।

সর্বশেষ খবর