শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

জিরো টলারেন্স দেখাতে চায় ইসি

রাত পোহালেই রাঙামাটির বাঘাইছড়ি পৌরসভা নির্বাচন

গোলাম রাব্বানী, ঢাকা ও ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

বিগত নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা কাটিয়ে আগামীতে সব নির্বাচনে জিরো টলারেন্স দেখাতে চায় নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ছাড়া আগামী সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলকে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছেন নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সবার দৃষ্টি বর্তমান ইসির দিকে। এজন্য সতর্কতা, নিষ্ঠা ও জিরো টলারেন্স নীতিতেই চলবেন তারা। গতকাল চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবালয়ের সচিব ও কর্মকর্তাদের নিয়ে পরিচিতিমূলক প্রথম বৈঠকে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এসব কথা তুলে ধরেন নতুন সিইসি। বৈঠকে উপস্থিত ইসি সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব বলেন।

এদিকে রাত পোহালেই রাঙামাটির বাঘাইছড়ি পৌরসভা নির্বাচন। এ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন ইসির যাত্রা হবে। এজন্য প্রথম এই নির্বাচনে জিরো টলারেন্স দেখাতে চাইছে ইসি। এ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ইতিমধ্যে সব ব্যবস্থা নিয়েছে ইসি সচিবালয়। আর নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা দেখতে আজ বাঘাইছড়িতে যাচ্ছেন নতুন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী। এ সময় রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজ্জারুল মান্নান তার সঙ্গে থাকবেন। এ সফরের বিষয়ে গতকাল ইসি সচিবালয়ে শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ‘নির্বাচন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলব। নির্বাচনে আমরা জিরো টলারেন্স দেখাতে চাই।’ আজ বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে রাঙামাটি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় করবেন এই কমিশনার।

গতকাল দুপুর ১২টায় আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রথম বৈঠক করেন নতুন ইসি সদস্যরা। এ সময় ইসি সচিবালয়ের সার্বিক অগ্রগতি, কাজের পরিধি-কাঠামো ও পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে একটি ধারণাপত্রও তুলে ধরেন ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। পরে নতুন সিইসিসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা নির্বাচন ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

বক্তব্যের শুরুতে নতুন সিইসি খান মো. নূরুল হুদা বলেন, ‘দেশে এ রকম আলোচিত ও সবার আগ্রহ আমাদের নিয়ে; অতীতে কখনো এমনটি হয়নি। সাধারণ মানুষ, দল, আন্তর্জাতিক সংস্থা সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আশা করি, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারব।’

তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক না হলে নির্বাচন বিতর্কিত হবেই। এ ক্ষেত্রে আগামী সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণও আশা করছেন তারা। একই সঙ্গে অতীতে অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় ভোট বিতর্কিত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বৈঠকে কর্মকর্তাদের সাহসিকতা ও দৃঢ়তার উদাহরণ টেনে ২০১০ সালের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা জেসমিন টুলীর প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, জেসমিন টুলী যখন চট্টগ্রামে একেবারে নিরপেক্ষতার সঙ্গে, দৃঢতার সঙ্গে, প্রত্যয়ের সঙ্গে পরিচালনা করে সফল একটা নির্বাচন উপহার দিলেন, তখন দেশবাসী তার দিকে তাকিয়ে ছিল। সব মানুষ বলেছিল, কীভাবে সম্ভব? তাকে কিন্তু কেউ প্রভাবিত করতে পারেনি বা তার সিদ্ধান্ত থেকে তাকে কেউ কোনোরকম বিব্রত বা বিচলিত করতে পারেনি। নূরুল হুদা বলেন, বলা হচ্ছে শুধু নির্বাচন কমিশনের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিলে ভালো নির্বাচন সম্ভব নয়। স্টেকহোল্ডার যারা আছেন, তারা যদি সহযোগিতা না করেন এবং অংশগ্রহণ না করেন তাহলে সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক না হয়; যদি সব দলের অংশগ্রহণ না থাকে সে ক্ষেত্রে নির্বাচন বিতর্কিত হবেই। সুতরাং আমরা আশা করব সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। সব দলের অংশগ্রহণ থাকলে ভারসাম্যমূলক পরিস্থিতিতে যোগ্য প্রার্থী নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও সহজে মোকাবিলা সম্ভব। যাই হোক, আমরা অত্যন্ত আশাবাদী। যে দক্ষ জনবল রয়েছে তাতে বাংলাদেশে ভালো নির্বাচন উপহার দেওেয়া সম্ভব হবে। শুধু একটা নয়, সামনে যেসব নির্বাচন আসবে তা দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করব।’ নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে কর্মকর্তাদের প্রতি অভয় দিয়ে নবনিযুক্ত সিইসি বলেন, ‘আমার একটাই কথা, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা যারা সিইসি ও ইসি হিসেবে যোগদান করেছি, শপথ নিয়েছি, আমাদের একটাই কথা, দলমতনির্বিশেষে সবকিছুর ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করব। মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তারা ভোটে অনিয়ম ঠেকাতে ব্যর্থ হলে ইসি নিজের ক্ষমতা দিয়ে তা মোকাবিলা করবে। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার নিজের বক্তব্যে ভারতের প্রসঙ্গ টেনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের কাজের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভারতে সুকুমার সেন ও টি এন সেসন দুজনই আমলা ছিলেন। তারা ভারতের মতো এত বড় বৃহত্তর একটা গণতান্ত্রিক দেশে কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন। সেজন্য আাামি যখন ভাবী, আমিও একজন আমলা ছিলাম, তখন তাদের কথা ভেবে অত্যন্ত গৌরববোধ করি।’ একাদশ সংসদ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকারও রয়েছে এই ইসির। নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদৎ হোসেন চৌধুরীও এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। যোগ দেওয়ার পরদিন গতকাল প্রথম কার্যদিবসে সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনার সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি প্রদ্ধা জানান।

রাত পোহালেই বাঘাইছড়ি পৌরসভা নির্বাচন : রাত পোহালেই রাঙামাটির বাঘাইছড়ি পৌরসভা নির্বাচন। কাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একযোগে ভোট গ্রহণ চলবে। এদিকে গতকালই নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করেছেন প্রার্থীরা। আজ ভোট কেন্দ্রে ব্যালটসহ নির্বাচনী মালামাল পাঠানো হবে। নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে মাঠে নেমেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় ভোটের আগে-পরে চার দিনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চারজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। বাঘাইছড়ি পৌরসভায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানান রাঙামাটি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মো. নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হওয়ার বিষয়ে পর্যবেক্ষণে বাঘাইছড়িতে আসছেন নতুন নির্বাচন কমিশনার। নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও ভোটারদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। এ নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন আওয়ামী লীগের জাফর আলী খান (নৌকা), বিএনপির মো. ওমর আলী (ধানের শীষ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুর রহমান (মোবাইল ফোন)। অন্যদিকে, ৯ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫ ও ৩টি সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে গঠিত হয় ভারতের মিজোরাম রাজ্যের সীমান্তবর্তী দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা বাঘাইছড়ি। এ পৌরসভাটির এটি দ্বিতীয় নির্বাচন। একটি পৌরসভাসহ আটটি ইউনিয়ন নিয়ে গড়ে উঠেছে এ উপজেলা। এ পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা ১০ হাজার ১৭৭। নির্বাচনে ৯ কেন্দ্রের ৩৩ বুথে ভোট গ্রহণ হবে।

সর্বশেষ খবর