দেশের তথ্য ও প্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিতে মার্চে যাত্রা শুরু করবে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। জ্ঞানভিত্তিক শিল্প এবং নতুন আইটি উদ্যোক্তা তৈরি করতে ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি কোম্পানিকে ফ্লোর বরাদ্দ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়া এই কর্মযজ্ঞের উদ্বোধনের জন্য মার্চের প্রথম সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রীর সময় চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। ২৮টি হাইটেক পার্ক চালু হলে গার্মেন্ট খাতের চেয়েও বেশি কর্মসংস্থান হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এই খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে আসছে সরকারি বরাদ্দ। দেশের ৭টি স্থানে তৈরি হবে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার। গত ৭ ফেব্রুয়ারি একনেকে এই প্রকল্পে ২৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে এই খাতে বিপ্লব আসবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, যশোর জেলা সদরে ১২.১৩ একর জায়গায় নির্মাণকাজ চলছে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের। ১৫ তলা এই ভবনের প্রথম থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে আর বাকি তলাগুলোর কাজও প্রায় ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ডরমেটরি ভবনের ৯০ শতাংশ এবং ক্যান্টিন ও এমপিথিয়েটারের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, ফাইবার অপটিক লাইন এবং অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই হাইটেক পার্কে দেশি-বিদেশি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আঞ্চলিক ব্যবসায়ীদের জন্যও দুয়ার খোলা রাখা হবে। শুধু তাই নয় আঞ্চলিক ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আগে বিভিন্ন জায়গায় অপরিকল্পিতভাবে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠত। কিন্তু সরকারিভাবে প্রযুক্তিখাতকে শিল্পে পরিণত করার উদ্যোগ নিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রচেষ্টায় ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে এই সম্ভাবনাময় তথ্য প্রযুক্তি খাত। হাইটেক পার্ক যে শুধু প্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নেবে তা নয়, এটি সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের একটি অংশ। এই পার্কে বিভিন্ন খাতে ব্যবহারের প্রস্তাবনার মধ্যে আছে, সফটওয়্যার ও আইটি সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানা, পিসিবি সংশ্লিষ্ট পণ্য উৎপাদন, টেলিকমিউনিকেশন, হার্ডওয়্যার অ্যাসেম্বলির ভিএলএসআই ডিজাইন এবং নির্মাণ, অপটো-ইলেকট্রনিক উপকরণ এবং বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।
এই খাতে সবচেয়ে কার্যকর জায়গা এই খাতে কাজ করার সুযোগ পাবে বিপুল পরিমাণের শিক্ষিত তরুণ এবং তৈরি হবে দক্ষ জনশক্তি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে এই মেধাভিত্তিক শিল্পে। তাই আইটি খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে ৫ হাজার জনের ট্রেনিং সম্পন্ন করা হয়েছে আরও ৬ হাজার ৭৭৩ জনের ট্রেনিং শেষের দিকে। আর ট্রেনিং কর্মসূচি নিয়মিত করার জন্য নাটোরে তৈরি হচ্ছে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার।শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। প্লট বরাদ্দ পাওয়া নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। আইটি শিল্পকে সুসংহত করে বাজার বাড়ানোর জন্য এই খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের এক ছাতার নিচে আনবে এই হাইটেক পার্ক প্রকল্প। এ ব্যাপারে হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে থাকলে আইটি শিল্পকে এগিয়ে নিতে কার্যকর সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এক জায়গায় সব শিল্প থাকলে পানি, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পণ্য পরিবহন এবং সার্বিক সহায়তা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য সুবিধাজনক হবে। তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে বিকেন্দ্রিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশের মেধাবী তরুণদের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থান তৈরি এবং তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগযোগ্য বিশ্বমানের পরিবেশ সৃষ্টিতে ২৮টি হাইটেক পার্কের নির্মাণকাজ চলছে। খুব দ্রুত যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক পরিপূর্ণভাবে কার্যক্রম শুরু করবে। এই আইটি পার্কগুলো হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের লাইফলাইন।