রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

জার্মানিতে ব্যস্ত প্রধানমন্ত্রী

রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক সাহায্য কামনা

প্রতিদিন ডেস্ক

জার্মানিতে ব্যস্ত প্রধানমন্ত্রী

জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের সঙ্গে বৈঠক শেষে শেখ হাসিনা —বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে একটি সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অস্থায়ী পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বাংলাদেশে অবৈধভাবে আসা মিয়ানমারের নাগরিকদের কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর ঠেঙ্গারচরে সরিয়ে নিতে এ সহযোগিতা চান। খবর : বাসস ও বিডিনিউজের।

মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের ফাঁকে গতকাল মিউনিখের বাইরিশার হফ হোটেলে দুই দেশের নেতাদের এ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, মেরকেলই এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জার্মান চ্যান্সেলরকে বলেন, তারা বাংলাদেশে আসার পর থেকে বাজে অবস্থার মধ্যে ছিল। কক্সবাজারে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার আশ্রয় নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এর প্রভাব ওই এলাকার পরিবেশ ও পর্যটনের ওপরও পড়ছে। পরিবেশ ও মানবিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কক্সবাজারে গাদাগাদি করে থাকা রোহিঙ্গাদের ‘মানবিক কারণেই’ ঠেঙ্গারচরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ মিয়ানমারের শরণার্থীদের পুনর্বাসনের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে। কিন্তু পর্যটন শহর কক্সবাজারে তাদের অবস্থান ও কর্মকাণ্ডের কারণে সেখানকার পরিবেশ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্যানিটেশনব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটছে; যা তাদেরও অমানবিক জীবনযাপনে বাধ্য করছে। তিনি বলেন, কাজেই বাংলাদেশ সরকার তাদের একটি উন্মুক্ত, স্বাস্থ্যকর এবং নাগরিক সুবিধাসংবলিত স্থানে সরিয়ে নিতে চায়। এজন্য জার্মানি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ঘণ্টাকালব্যাপী এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক জোরদার, উন্নয়ন, শরণার্থী সমস্যাসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। বৈঠকের পর দেশে বিদ্যমান মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট সিস্টেমের আরও আধুনিকায়নে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক এবং সন্ত্রাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে একটি যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়।

মেরকেল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তার অঙ্গীকার করেন তিনি। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আগামীতে আরও জোরদার হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন জার্মান চ্যান্সেলর।

ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে মেরকেলকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জার্মানির সমর্থনের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, মুখ?্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন। তিনি আরও জানান, সন্ত্রাসবাদ দমনে একসঙ্গে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জার্মানির ফেডারেল অফিসের মধ্যে একটি যৌথ বিবৃতি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (ইউরোপ) মোহাম্মদ খোরশেদ এ খাস্তগীর ও জার্মানির পক্ষে ডিরেক্টর জেনারেল ফর ইন্টারন্যাশনাল অর্ডার, দি ইউনাইটেড নেশন্স অ্যান্ড আর্মস কন্ট্রোল অ্যাম্বাসাডর প্যাট্রিসিয়া ফ্লোর স্বাক্ষর করেন।

ক্ষতিগ্রস্তরা বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন : গত শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকালে ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের এক সংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে দুর্নীতির ভ্রান্ত অভিযোগে যাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল বিশ্বব্যাংক, সেই ক্ষতিগ্রস্তরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শোকরিয়া, পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে ভিত্তিহীন দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের অর্থ প্রত্যাহারের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা বিচার পেল। তারা আমার ছেলে এবং মেয়ে, বোন, আমার মন্ত্রিসভার সদস্য, উপদেষ্টা, সচিবদের এই অভিযোগের সঙ্গে জড়াতে চেয়েছে।

প্রমাণ হলে খালেদার শাস্তি হবেই : একই অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচন হতে পারবে না বলে বিএনপির হুঁশিয়ারির প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আদালতে দোষী প্রমাণিত হলে তার শাস্তি হবেই। তিনি বলেন,  একটা চোর, এতিমের টাকা যে চুরি করে খায়, তাকে রক্ষার জন্য ইলেকশন হতে দেবে না! কত আবদারের কথা, কত আহ্লাদের কথা! এত আহ্লাদ যখন, তখন গরিব মানুষের টাকা কয়টা দিয়ে দিলেই হতো। এ মামলায় বিচারিক আদালতের প্রতি অনাস্থা এনে উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার আবেদনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা মামলার জন্য হাই কোর্টে ৫৩/৫৪ বার পিটিশন করেছে। এখন মামলা থেকে পালায়। মিথ্যা মামলা হলে পালানোর কী দরকার? এটা তো পরিষ্কার; এতিমখানার টাকা মেরে খেয়েছে। এটা তো কাগজপত্রে আছে।

বিএনপি নেত্রী ‘পাকিস্তানের সুরে কথা বলেন’ বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তান যে সুরে কথা বলে, খালেদা জিয়াও সেই সুরে কথা বলেন। খালেদা জিয়ার মুখেও একই কথা শুনি। ৩০ লাখ মানুষ নাকি মারা যায়নি। তা নিয়েও তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন।

পাকিস্তানিরা যে সুরে কথা বলেন, উনি সেই সুরে সুর দেন, কেন?

নতুন নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশনের জন্য আমাদের তালিকা থেকে একজন নিয়েছে। বিএনপির তালিকা থেকে একজন নিয়েছে। তাতেও দোষ। তাদের সব কিছুতেই নাখোশ। সব কিছুতেই মানি না, মানব না।

সর্বশেষ খবর