মহান একুশ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করতে প্রয়োজন হয়েছে বিশাল সংগ্রাম, আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার আত্মাহুতির। রক্তের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষার যে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা বিশ্বে বিরল। অন্য জাতির এই গৌরব নেই। ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরেই অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অগণিত মানুষের অংশগ্রহণে ৩০ লাখ শহীদ ও অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, ভাষাপ্রেমের মধ্য দিয়ে দেশপ্রেম প্রকাশ পায়। ১৯৯৯ সাল থেকে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। যে পাকিস্তান আমাদের রাষ্ট্রভাষার বিরোধিতা করেছিল তাদেরও এ দিবস পালন করতে হয়। তবে আমাদের জাতীয় জীবনে আমরা বাংলা ভাষার যথার্থ ব্যবহার করতে পারিনি। বিশেষ করে বাংলা ভাষার ব্যবহারিক রূপটি এখন নানাভাবে বাধাগ্রস্ত। তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, আগের চেয়ে আমাদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ফেব্রুয়ারিজুড়ে একুশে বইমেলা হচ্ছে, সেটাও বিশ্বে অনন্য উদাহরণ। এর মাধ্যমে আমাদের জাতীয় জীবনে সৃজনশীল সংস্কৃতিচর্চার প্রকাশ পায়। রেডিও, টেলিভিশনে বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হতে হবে। গণমাধ্যমে ‘এক ভাষা’ নীতি অনুসরণ করতে হবে। তাহলে ভাষা ও বানান বিভ্রান্তি হবে না। এ ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানরীতি অনুসরণ করতে হবে। তার পরও ঔপনিবেশিক চিন্তা আমাদের রয়ে গেছে। আমরা ইংরেজি ব্যবহারে মনোযোগী হয়ে নিজেকে উন্নত বলে অপপ্রয়াস চালাই। এই প্রভাব সাহিত্য, চলচ্চিত্র সর্বত্র দেখা যাচ্ছে। তবে কালের বিচারে এসব টিকবে না। বিভিন্ন সময় সাম্প্রতিক চিন্তার সঙ্গে ভাষাকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা থাকে। তার পরও বলব, বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের অনুরাগ বৃদ্ধি পেলে আমরা আরও এগিয়ে যাব। লেখক : কবি।