বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সাবেক এমপি কাদের গ্রেফতার

কিলিং মিশনে তিনজন, দুজন পুলিশ হেফাজতে

সাখাওয়াত কাওসার, ঢাকা ও আব্দুর রহমান টুলু, বগুড়া

সাবেক এমপি কাদের গ্রেফতার

লিটন হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে সাবেক জাপা এমপি কাদের খানকে বগুড়া থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

টানা ছয় দিন পুলিশ পাহারার পর অবশেষে গাইবান্ধা-১ আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল বিকাল ৫টার দিকে তাকে বগুড়া শহরে তার বাড়িতে গ্রেফতার করা হয়। পরে গাইবান্ধা জেলা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যার মূল পরিকল্পক কাদের খান। তার নির্দেশেই রাশেদুল ইসলাম মেহেদী, শাহীন ও রানা নামের তিনজন কিলিং মিশনে অংশ নেন। এর মধ্যে মেহেদী ও রানাকে গ্রেফতারের কথা স্বীকার করেছে পুলিশ। এ দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক।

আইজিপি শহীদুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তদন্তে এ পর্যন্ত যত তথ্য এসেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে কাদের খানের পরিকল্পনাতেই এ খুনের ঘটনা ঘটেছে। কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া তিনজনের মধ্যে মেহেদী ও শামীমকে আমরা গ্রেফতার করেছি। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তারাও বলেছেন কাদের খানের নাম। কিলিংয়ে অংশ নেওয়া রানা নামের আরেকজনকে গ্রেফতারের জন্য আমাদের অভিযান চলছে।’ তদন্তসূত্র বলছে, রানাকেও পুলিশ সদর দফতরের এলআইসি ইউনিট আটক করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। রানাও আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেবেন। তবে গ্রেফতার রাশেদুল ইসলাম মেহেদী ও শাহীন সাবেক এমপি কাদের খানের ঘনিষ্ঠজন। এরা জাতীয় পার্টির সমর্থক। আদালতে তাদের জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়টি পুলিশ গোপন রেখেছে। সূত্র আরও বলছে, কাদের খান এমপি থাকতে লিটন আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এখন তিনি কাদের খানকে বিভিন্নভাবে অসহযোগিতা করছিলেন। এ নিয়ে ক্ষোভ ছিল কাদেরের। ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও ঘটনায় কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। মামলার কারণেও তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন। তবে ২০১৪ সালে এমপি লিটনের গুলিতে এক শিশুর আহত হওয়ার ঘটনা দেশব্যাপী নিন্দিত হয়। এলাকার অনেকেই বিষয়টিকে সহজভাবে নিতে পারেননি। আর কাদের খান এ পরিস্থিতির সুযোগটি নিতে চেয়েছিলেন বলে ধারণা তদন্তসংশ্লিষ্টদের। ১৫ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার কদমতলীতে কাদের খানের গাড়িচালক হান্নান ও তার ব্যক্তিগত সহকারী রাশেদুল ইসলাম মেহেদীকে পুলিশ আটক করে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় এর আগে ১৫ জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যায় গাইবান্ধার পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম জানান, এমপি লিটন হত্যা মামলায় কর্নেল (অব.) কাদের খানকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার (আজ) আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়টি জানানো হবে। জানা গেছে, কাদের খানকে গ্রেফতারের পর তার বগুড়ার বাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে তার নিকটাত্মীয় ছাড়া তেমন কাউকে দেখা যায়নি। পুলিশ পুরো বাড়ি ঘিরে রেখে তল্লাশি চালায়। তার বাড়িতে কী পাওয়া গেছে সে বিষয়ে পুলিশ সাংবাদিকদের কিছু জানায়নি। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে কাদের খানের বগুড়া শহরের রহমাননগর জিলাদারপাড়ার বাড়িতে সাদা পোশাকধারী ও পোশাক পরিহিত পুলিশ অবস্থান নেয়। শুক্রবার ডাক্তার কাদেরের সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও শনিবার তা শিথিল করা হয়। গ্রেফতারের আগে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ আসনের উপনির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন না। নির্বাচন না করার বিষয়টি তিনি কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানিয়েছেন। সুন্দরগঞ্জ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন ৩১ ডিসেম্বর তার বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন।

 

 

কে এই কাদের খান : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ২০০৮ সালে সুন্দরগঞ্জের এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব) ডা. আবদুল কাদের খান। তিনি রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডা. কাদের খান লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এমপি লিটনের কাছে পরাজিত হন। তার পৈত্রিক বাড়ি সুন্দরগঞ্জের ছাপড়হাটী ইউনিয়নের খানপাড়া গ্রামে। তার স্ত্রী নাছিমা বেগমও পেশায় চিকিত্সক। বগুড়ায় তাদের নিজ বাসায় ‘গরিব শাহ ক্লিনিক’ নামে একটি ক্লিনিক রয়েছে। তারা সেখানেই বসবাস করেন।

সর্বশেষ খবর