বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে : ক্যাথরিন

বেপরোয়া বাস চালকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

আসামির বেপরোয়া আচরণ ও অবহেলার কারণেই সড়কে তারেক মিশুকসহ পাঁচজনের মর্মান্তিক মৃত্যু : আদালতের পর্যবেক্ষণ

মানিকগঞ্জ ও ভাঙ্গা প্রতিনিধি

বেপরোয়া বাস চালকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

জমির হোসেন

মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত মামলার রায়ে বেপরোয়া বাসচালক জামির হোসেনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে জরিমানাও করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে আসামির উপস্থিতিতে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আল মাহমুদ ফয়জুল কবীর এ রায় প্রদান করেন। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, আসামি জমির হোসেনের বেপরোয়া আচরণ ও অবহেলার কারণেই ঘটনাস্থলে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। রায় অনুযায়ী, দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড এবং দণ্ডবিধির ৪২৭ ধারার অপরাধে দুই বছরের   কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। সন্তোষ প্রকাশ করে তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ বলেন, ‘এ রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’ সড়ক দুর্ঘটনাগুলোতে স্বজন হারানো অন্য সবাই বিচার পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন মিশুক মুনীরের স্ত্রী মঞ্জুলী কাজী। তিনি বলেন, ‘আমি রায়ে সন্তুষ্ট। আদালত সবকিছু বিবেচনা করে রায় দিয়েছে। আমি বলব, এটা একটা যুগান্তকারী রায়। এখনো উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। আপিল করে  দোষী ব্যক্তিরা বেরিয়ে আসতে পারেন। তবে রায় বাস্তবায়িত হলে অন্যরাও সচেতন হবেন। গাড়ি চালকরাও বুঝবেন তাদের কারণে মানুষের মৃত্যু হলে কঠিন সাজা ভোগ করতে হবে।’ তারেক মাসুদের ছোট ভাই হাবিবুর রহমান মাসুদ বলেন, ‘আমরা খুশি। এটাই আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম। এ রায় যেন বহাল থাকে- এ দাবিই করছি।’ তারেক মাসুদের বন্ধু ইকবাল হোসেন কচি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর রায় হলেও আমি আজ খুশি। এ রায়ের ফলে বেপরোয়া চালকরা সাবধান হবেন বলে আশা করি।’ রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আফসারুল ইসলাম জানান, মামলার রায় আরও অনেক আগেই হতো। সময়মতো সাক্ষীরা না আসার কারণে এত দিন সময় লেগেছে। সাক্ষ্য, যুক্তিতর্ক শেষে এ রায় প্রদান করেছে আদালত। রায়ে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। আসামি পক্ষের কৌঁসুলি মাধব সাহা বলেন, আমরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের মোট ২৪ জন এবং আসামি পক্ষের দুজন সাফাই সাক্ষী দিয়েছেন। গত রবিবার রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্কে অংশ নেন এপিপি আফসারুল আমিন এবং আসামি পক্ষের আইনজীবী মাধব সাহা। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট শিবালয়ের শালজানা গ্রামে ‘কাগজের ফুল’ ছবির শুটিং স্পট দেখে ঢাকায় ফেরার পথে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জোকা এলাকায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ ৫ জন নিহত এবং তিনজন আহত হন। এ ঘটনায় ঘাতক বাস চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের চালক জামির হোসেনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ।

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় স্বস্তি : তারেক মাসুদ নিহত হওয়ার জন্য দায়ী ঘাতক বাসচালকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ায় খুশি তার পরিবার, স্বজন ও গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গার লোকজন। তারেক মাসুদের ছোট ভাই হাবিবুর রহমান মাসুদ বলেন, ‘আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করছি। এমন রায়ই প্রত্যাশা করেছিলাম। এ রায় যেন বহাল থাকে।’ ভাঙ্গার সংস্কৃতিকর্মী কাজী কাওছার বলেন, ‘এই রায়ে আমরা খুশি।’  উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ভাঙ্গা শাখার সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সঠিক বিচার হয়েছে। এ রায় যেন শেষ পর্যন্ত বহাল থাকে।’ ভাঙ্গা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ এ এইচ এম রেজাউল করিম বলেন, ‘তারেক মাসুদ আমাদের সম্পদ ছিলেন। বেপরোয়া বাস চালানোর কারণেই আমরা তাকে অকালে হারিয়েছি। ঘাতক চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়ায় প্রগতিশীল মানুষ একটু হলেও স্বস্তি পাচ্ছেন।’

সর্বশেষ খবর