বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বার্নিকাটের সঙ্গে ৪০ মিনিট একান্ত বৈঠকে খালেদা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন দেখতে চায়। যে নির্বাচনে দেশটির গণতন্ত্র আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। কোনো রকমের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন প্রত্যাশা করে না তার দেশ। প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করে নেবে। গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে টানা দুই ঘণ্টার বৈঠককালে তিনি এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বলে বৈঠকসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এর মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ৪০ মিনিটেরও বেশি সময় ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তার আগে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে বার্নিকাটের সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কাউন্সিলর। বৈঠক শেষে সংক্ষিপ্ত এক ব্রিফিংয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে বাংলায় বলেন, ‘শুভসন্ধ্যা’। তিনি আরও জানান, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দেখা করা এবং চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুধাবন করা একজন রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমার দায়িত্ব।’ সম্প্রতি তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় সাধারণভাবে তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। ভবিষ্যতেও তিনি অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটা ছিল ‘জাস্ট’ একটা ‘জেনারেল ডিসকাশন’। রাজনীতি, নির্বাচন কমিশন, জাতীয় নির্বাচন, গণতন্ত্রসহ দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সবকিছুই এতে স্থান পেয়েছে। এ সময় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারের আচরণের কথাও জানতে চেয়েছেন মাার্কন রাষ্ট্রদূত। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো সুপারিশ কিংবা কোনো পরামর্শের কথা কোনো পক্ষই বলেনি। কাজেই এটাকে বরাবরের মতোই গতানুগতিক একটা সাক্ষাৎই বলা যেতে পারে। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক দৃশ্যই উঠে এসেছে বৈঠকের আলোচনায়। যুক্তরাষ্ট্র সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় আগামীতে। যে প্রত্যাশা তারা বরাবরই ব্যক্ত করে আসছে।

বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে কী ধরনের সরকার থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে সে বিষয়টিও আলোচনায় স্থান পেয়েছে। তা ছাড়া বেগম খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক রহমানসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর মামলা-হামলা ও হয়রানি-নির্যাতনের বিষয়টিও অনেকটা নালিশের সুরেই উত্থাপন করে বিএনপি। বিশেষ করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার লক্ষ্যে তাদের নামে দায়ের করা রাজনৈতিক মামলাগুলোর প্রক্রিয়া অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে চলছে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়। এ ছাড়া আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ কেমন হবে এবং সে সময় নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী হতে পারে তা নিয়েও আলোচনা হয়। বেগম খালেদা জিয়া মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে তার দেশের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও জনগণকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। এ সময় তিনি দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন।

বৈঠক শেষে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মার্শা বার্নিকাটের সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত থাকলেও কোনো বক্তব্য দেননি।

সর্বশেষ খবর