শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
গঠনতন্ত্র নেই দুই দলে

কাউন্সিলের এক বছরেও দিতে পারেনি বিএনপি

মাহমুদ আজহার

কাউন্সিলের এক বছরেও দিতে পারেনি বিএনপি

জাতীয় কাউন্সিলের এক বছরেও দলীয় গঠনতন্ত্র বই আকারে প্রকাশ করতে পারেনি বিএনপি। কবে নাগাদ প্রকাশ হবে তা দলের কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না। গঠনতন্ত্র প্রকাশ না হওয়ায় বিএনপির নির্বাহী কমিটি কত সদস্যবিশিষ্ট, নতুন কী সংশোধনী আনা হলো—এ ব্যাপারে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও ধূম্রজালে। কার্যত গঠনতন্ত্র ছাড়াই চলছে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। জানা যায়, তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গঠনতন্ত্র নিতে এসেও বার বার ফিরে যাচ্ছেন। ২০০৯ সালের পুরনো গঠনতন্ত্র ধরেই কাজ করে যাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। গঠনতন্ত্র হাতে না পাওয়ায় সাংগঠনিক অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না দলটি। খসড়া গঠনতন্ত্রে উল্লেখ ছিল, মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ২৬টি উপকমিটি হবে। কিন্তু ওই কমিটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। আদৌ ওই কমিটি হবে কিনা তা নিয়েও সন্দিহান দলের নেতা-কর্মীরা। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে গঠনতন্ত্র চাইলে তিনি জানান, গঠনতন্ত্র এখনো ছাপা হয়নি। ২০০৯ সালের পুরনো গঠনতন্ত্র রয়েছে। কবে নাগাদ নতুন গঠনতন্ত্র পাওয়া যাবে—এমন প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা জানান, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। পরে সহ-দফতর সম্পাদক পর্যায়ের এক নেতাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনিও সাফ জানিয়ে দেন, এ বিষয়টি তার জানা নেই। এ প্রসঙ্গে গতকাল বিকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কাউন্সিলেই গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত হয়েছে। এখন শুধু চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সই বাকি। আশা করছি, শিগগিরই গঠনতন্ত্র ছাপা হবে। তবে তিনি এও বলেন, বড় রাজনৈতিক দলে সবকিছুই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আশা করা যায় না। বিএনপি নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে এখন সাংগঠনিক কাজ করছে। তারপরও আশা করছি, খুব শিগগিরই গঠনতন্ত্র প্রকাশ করা হবে। চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে আসা উপজেলা পর্যায়ের এক নেতার সঙ্গে সম্প্রতি দেখা হয় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। দলের গঠনতন্ত্র নিতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে জানানো হয়, গঠনতন্ত্র নেই, ছাপা হলে পরে যোগাযোগ করুন। ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাওয়ার সময় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি জানান, কাউন্সিল হয়েছে এক বছর। বিএনপির মতো বড় দলে এখনো গঠনতন্ত্র ছাপা হয়নি। এত দূর থেকে এসে এভাবে ফিরে যাওয়ার চেয়ে বড় দুঃখ আর কী হতে পারে।

২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে এক নেতার এক পদের বিধান রেখে খসড়া গঠনতন্ত্র অনুমোদন দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ২৬টি উপকমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। গঠনতন্ত্রে বলা হয়, প্রতিটি উপকমিটিতে সর্বোচ্চ ১২ জন সদস্য থাকবেন। দলের সদস্য ফি ৫ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা করা হয়। কেউ মাসিক চাঁদা ৬ মাস না দিলে তার পদ স্থগিত করা হবে। আর এক বছর না দিলে পদ বাতিল করা হবে। আর টানা দুই বছর চাঁদা না দিলে তার প্রাথমিক সদস্য পদ স্থগিত করা হবে। তিন বছর না দিলে প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করা হবে।  গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করা হয়, নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ১৭ থেকে ৩৫ জন। উপদেষ্টা পদ চেয়ারপারসন যত খুশি তত রাখতে পারবেন। সাংগঠনিক সম্পাদক প্রতি বিভাগে একজন এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক থাকবেন প্রতি বিভাগে দুজন। জানা যায়, কাউন্সিলে অনুমোদিত গঠনতন্ত্র ধরেই ৫০২ সদস্যবিশিষ্ট বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী ওয়ার্ড, থানা, উপজেলা, জেলা ও মহানগর কমিটির রূপরেখা তৃণমূলে পাঠানো হয়। জানা যায়, কাউন্সিল অনুমোদিত গঠনতন্ত্র অনেক ক্ষেত্রেই মেনে চলছে না বিএনপি। এক নেতার এক পদের বিধান যুক্ত হলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেক নেতাই এখনো একাধিক পদে বহাল রয়েছেন। এ ব্যাপারে দলের উচ্চপর্যায় কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। স্বল্প পরিমাণে মাসিক চাঁদা দেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ নেতাই মাসের পর মাস বকেয়া রাখছেন। গঠনতন্ত্র না থাকায় এ ব্যাপারে সাংগঠনিক বিধিও প্রয়োগ করতে পারছে না দলটি।

সর্বশেষ খবর