শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে

দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে দুশ্চিন্তা না করতে বলেছেন মোদি : জয়শঙ্কর

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলো সমাধানের বিষয়ে কোনো ধরনের দুশ্চিন্তা না করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সম্পর্কের নতুন ‘দিশা’কে এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনাকে নয়াদিল্লিতে দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বলেও জানিয়েছেন মোদি। আসছে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সফরে যেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মত হওয়ায় আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্রও পাঠিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। গতকাল ঢাকায় আসা ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এসব বার্তা পৌঁছান। পরে ঢাকা ও নয়াদিল্লির পররাষ্ট্র সচিবদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সফরের বিষয়ে চূড়ান্ত করা হয়। ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে থাকা ২০ চুক্তি-সমঝোতার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও আলোচনা হয়েছে পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকে। কূটনৈতিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের ফিরতি হিসেবে শেখ হাসিনা নয়াদিল্লি যাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই কয়েকবার পিছিয়ে যাওয়ার পর এ সফরই হবে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর শেখ হাসিনার প্রথম ভারত সফর। জানা যায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ২০১৫ সালের ৬-৭ জুন বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। তখনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ভারত সফরে আমন্ত্রণ জানান মোদি। এই সফর গত বছরের ডিসেম্বরে হওয়ার কথা ছিল। পরে ফেব্রুয়ারিতে সফরের ইঙ্গিত দেওয়া হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এপ্রিলে যাওয়ার সম্মতি দিলেন। গুরুত্বপূর্ণ এ সফরের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই ঢাকা সফরে এলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর। দুই দিনের সফরে তিনি দুপুরে বেইজিং থেকে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। পরে বিমানবন্দর সড়কের একটি হোটেলে বিশ্রামের পর বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন জয়শঙ্কর। সন্ধ্যায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবরা। জয়শঙ্কর আজ সকালে নয়াদিল্লি ফিরে যাবেন।

সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতীয় সচিবের প্রায় ৩০ মিনিটের সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেসসচিব এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এপ্রিলের প্রথমার্ধ্বে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে যাচ্ছেন। সাক্ষাতে ভারত সফর ছাড়াও আঞ্চলিক যোগাযোগ আরও জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। জয়শঙ্কর বলেন, সফরে প্রধানত পারস্পরিক স্বার্থ এবং ধাপে ধাপে উন্নয়ন উদ্যোগের পাশাপাশি যোগাযোগ সংযুক্তির বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে। স্থল সীমান্ত এবং ছিটমহল সমস্যাসহ প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য যদি ভালো হয়, আলোচনার মাধ্যমে আমরা যে কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারব। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বর্তমানে স্থবির সার্কের প্রসঙ্গ তুলে ধরায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এটি ডুবে যেতে দেব না। বিবিআইএন মটরভেহিকেল চুক্তির ব্যাপারে আলাপকালে শেখ হাসিনা চার দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই উদ্যোগ কার্যকর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক এবং ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা প্রমুখ।  সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সচিবদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রপতি ভবনেই থাকবেন। পরে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন ইস্যুতে চুক্তি ও সমঝোতার প্রস্তাবনাগুলো আরেক দফা খতিয়ে দেখেন দুই সচিব। আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার সহযোগিতা রূপরেখা চুক্তিসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প সমঝোতা ও সহযোগিতার চুক্তির প্রসঙ্গ। সিদ্ধান্ত হয়, শীর্ষ সফরের আগে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ে আরও সফর বিনিময়ের। নতুন করে আরও কিছু চুক্তি ও সমঝোতার প্রস্তাবও এসেছে আলোচনায়। ভারতের পক্ষ থেকেই ৪১টি চুক্তির প্রস্তাবনা আছে। সূত্র মতে, তিস্তা চুক্তির বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা কোনো পক্ষ থেকেই জানা যায়নি। নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে ‘দুশ্চিন্তা না রাখার’ বার্তা দেওয়ায় আশা ছাড়ছে না বাংলাদেশ। তিস্তা চুক্তি এবারও বাংলাদেশের প্রধান অগ্রাধিকার বলে ভারতীয় পক্ষকে জানানো হয়েছে। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা দুই প্রতিবেশীর মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ ও মতবিনিময়েরই একটি অংশ ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফর। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণপত্র তুলে দিয়েছেন। জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, ভারত প্রতিবেশী বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবেই দেখতে চায়।

সর্বশেষ খবর