শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

এবার ঘর পুড়ছে জামায়াতের

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঘর পুড়ছে এবার বিএনপি জোটের প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামীর। দলের ভিতরে বড় কর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা এত দিন মুখ বুঝে সহ্য করলেও এবার বিস্ফোরিত হতে যাচ্ছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। ব্যাপক তোলপাড় চলছে দলটির ভিতরে। সারা দেশে সংগঠনটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মেহনতে উপার্জিত অর্থের একটি অংশ তারা দলের ফান্ডে দিয়ে থাকেন। যা দিয়ে চলে দলের সব ধরনের ব্যয় ও কল্যাণমূলক সব কার্যক্রম। এবার সেই অর্থ তছরুপের অভিযোগ উঠেছে খোদ সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। আর সেই অর্থ আত্মসাতের ঘটনার প্রতিবাদ করায় এবং তা ধামাচাপা দিতে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আতাউর রহমানকে। যিনি এর আগে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে রাজশাহী মহানগরী জামায়াতের আমিরের দায়িত্ব পালন করেছেন। দলের আমির মকবুল আহমাদ, নায়েবে আমির গোলাম পরওয়ার ও নবনিযুক্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান গং জরুরি বৈঠক করে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আতাউর রহমানকে বহিষ্কারের এই সিদ্ধান্ত নেন। এর সত্যতা স্বীকার করে মাওলানা আতাউর রহমান বলেন, বহিষ্কারের এই সিদ্ধান্তের কথা মৌখিকভাবে আমাকে জানানো হয়েছে।  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামীর একজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জানান, সংগঠনটির গঠনতন্ত্রে এভাবে চুপিসারে কাউকে বহিষ্কারের ঘটনা নজিরবিহীন। গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুসারে দল থেকে কাউকে বহিষ্কার করতে হলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে তা উত্থাপন করে পরিষদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুসারে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। সেই তদন্ত কমিটির তদন্তে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হতে হবে। তাহলেই কেবল তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। কিন্তু মাওলানা আতাউর রহমানের ক্ষেত্রে এসব নিয়মের কোনো বালাই মানা হয়নি। নির্বাহী পরিষদের কারও কোনো মতামতও নেওয়া হয়নি। ফলে তাকে বহিষ্কারের মাধ্যমে সংগঠনটির আমির মকবুল আহমাদসহ সংশ্লিষ্ট নেতারা স্পষ্টত দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছেন। এ প্রসঙ্গে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য মোবারক হোসেন বলেন, এ ধরনের ঘটনা জামায়াতে ইসলামীতে নজিরবিহীন। এই বহিষ্কারাদেশের মাধ্যমে দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনই শুধু নয়, এর মাধ্যমে রীতিমতো অবিচার করা হয়েছে মাওলানা আতাউর রহমানের মতো একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক নেতার প্রতি। তা ছাড়া সারা দেশের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের কষ্টার্জিত অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও আরেকটি বড় অন্যায়। অতীতে জামায়াতে ইসলামীর ভিতরে এ ধরনের ঘটনা কখনই ঘটেনি। বরং যে যা-ই বলুক না কেন, রাজনীতিতে এই সংগঠনটির ভিতরেই নিয়ম-শৃঙ্খলা সবচেয়ে বেশি বলে সর্বস্তরের মানুষ জানে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দু-একজন ব্যক্তির নিজস্ব স্বার্থ রক্ষার জন্য আজ সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থ বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের একজন জানান, গত এক বছর ধরেই সংগঠনটির ভিতরে এমন সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে- যা তার গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সাংঘর্ষিক। বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানকে দলের সেক্রেটারি জেনারেল বানানোর সময়ও দলের আমির কোনো রকমের নিয়ম-নীতির ধার ধারেননি। এমনকি তখনকার কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্যদেরও কাউকে তা জানানো হয়নি। কাউকে না জানিয়েই তিনি এসব করেছেন। যা দলের গঠনতন্ত্রের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। এসব ঘটনা দেশের উল্লেখযোগ্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও এসেছে। তখন ডা. শফিকুর রহমানকে গোপনীয়তা বজায় রেখে দলের সেক্রেটারি জেনারেল বানানো হয়েছে। যার বিরুদ্ধে বর্তমানে ’৭১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত চলছে। সেক্রেটারি জেনারেল নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি যেভাবে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করলেন সেটিও অত্যন্ত নজিরবিহীন। সারা দেশের নেতা-কর্মীরা এখন ক্ষোভে ফুঁসছেন। তারা এসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিকার চান। বিশেষ করে সারা দেশের নেতা-কর্মীদের মেহনতের জমাকৃত টাকা আত্মসাতের ঘটনার প্রকৃত তদন্ত ও সঠিক বিচার চান তৃণমূল নেতারা। তারা চান তাদের শ্রমে-ঘামে উপার্জিত অর্থের সৎ ব্যবহারের নিশ্চয়তা। একই সঙ্গে বিশ্বের নানা দাতা দেশ ও সংস্থা থেকে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য প্রাপ্ত অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা চান তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। কতিপয় শীর্ষ নেতার দলীয় ফান্ডের অপব্যবহার ও ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের প্রচারিত অভিযোগে আজ তৃণমূল নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ। যে কোনো মুহূর্তে সেই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর