রবিবার, ৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

সন্তানদের জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তি থেকে দূরে রাখুন : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সন্তানদের জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তি থেকে দূরে রাখুন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়েদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনাদের সন্তানের সঙ্গে মায়েদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যাতে করে আর কেউ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তির পথে না যায়। সন্তানের জন্য সব থেকে বড় বন্ধু হবেন ‘মা’। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। মাদকাসক্তি থেকে সন্তানদের রক্ষা করতে হবে। এজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। আর ছেলেমেয়েরা যেন লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহিলা আওয়ামী লীগের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে নারীরাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে। মেয়েরা মায়ের জাত আর ইসলাম শান্তির ধর্ম। মানুষ হত্যা করে কীভাবে তারা ইসলাম ধর্ম পালন করছে আমি জানি না। যারা এ রকম নিরীহ মানুষ হত্যা করবে তাদের স্থান কখনো বেহেস্তে হতে পারে না। মানুুষ হত্যা মহাপাপ, মানুষ হত্যাকারীর স্থান হবে দোজখে। আমি আমাদের মা-বোনদের বলব, একটা জিনিস আপনারা জানেন আজকে শুধু বাংলাদেশ নয় সমগ্র বিশ্বে একটা নতুন উপসর্গ হচ্ছে জঙ্গিবাদের আবির্ভাব। প্রধানমন্ত্রী সংগঠনের কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মী ভাই-বোনদের আমি বলব আপনারা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যারা এসেছেন— তারা নিজ নিজ পরিবারে লক্ষ্য রাখবেন ছেলেমেয়রা কোথায় যায় এবং কার সঙ্গে মেশে, কী করে, পড়াশোনা ঠিকমতো করছে কিনা, স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত যাচ্ছে কিনা, নিশ্চয়ই সেটার খবর রাখতে হবে। সরকার ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস মোকাবিলায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে আহ্বান করেছি এবং ঐক্যবদ্ধ করেছি। সেখানে অভিভাবক, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম এবং ওলামা মাশায়েখসহ বিভিন্ন পেশাজীবী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যার যার নিজের সন্তানদের রক্ষা করতে হবে। এই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং মাদকাসক্তির পথে যেন তারা না যায়। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এমডি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করায় এর কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী ক্ষুদ্র ঋণের প্রশংসা করে বললেন, ক্ষুদ্র ঋণের জন্য নাকি দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। যদি এ কারণে দারিদ্র্য বিমোচন হতো তাহলে তা ৬০ ভাগে কেন ছিল? আর এখন কেন ২২ ভাগে নেমেছে? অর্থমন্ত্রীকে বলব আপনি যদি হিসাব নেন, তাহলে এর কারণ দেখতে পারবেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গৃহীত নানা পদক্ষেপের কারণে দরিদ্রতা ২২ ভাগে নেমে এসেছে। যেখানে অর্থমন্ত্রীও কর্মসূচি নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মা-বোনেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করে। আর লাভ নিয়ে যায় ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসায়ীরা। যারা ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা করে তারাও চায় না দরিদ্রতা থেকে সাধারণ মানুষ উঠে আসুক। তা করলে তাদের ব্যবসা থাকবে না। দুঃখ লাগে অর্থমন্ত্রী এমন একজনের প্রশংসা করলেন যার কারণে পদ্মা সেতুর কাজই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমেরিকা থেকে আমাকে বার বার হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমার ছেলেকে বার বার স্টেট ডিপার্টমেন্টে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এখন কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয়েছে পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। অর্থমন্ত্রীকে বলি দরিদ্রতা বিমোচন হয়েছে আওয়ামী লীগের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সামগ্রিক নিরাপত্তা কাজ যখন শুরু করল তখনই দারিদ্র্যের হার কমেছে। ৫ কোটি মানুষ আজ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষ পুরস্কৃত হয় আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারা তিরস্কৃত হয়। বেলা সোয়া ১১টায় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা ও মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুন্নেছা মোশাররফ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পুিন খান সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর প্রধানমন্ত্রী পায়রা উড়িয়ে ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দফতর সম্পাদক শিরিন রোকসানা। সংগঠনের সভাপতি আশরাফুন্নেছা মোশাররফের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন অভ্যর্থনা উপকমিটির সহসভাপতি সাফিয়া খাতুন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুননেছা ইন্দিরা। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পিনু খান এমপি। এদিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী সভাস্থল ত্যাগের পর সংগঠনের কিছু নেত্রী ও কর্মীর হৈ-হট্টগোলে বিশৃঙ্খলাপূর্ণ এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের উদ্দেশে বলেন, নিজেদের কখনো অপাঙেক্তয় ভাবা যাবে না। প্রত্যেকটি মানুষেরই কর্মদক্ষতা আছে, কর্মক্ষমতা আছে। যার যেটুকু আছে সেটা দেশের কাজে লাগাতে হবে। বিশেষ করে যারা রাজনৈতিক কর্মী তাদের একটাই লক্ষ্য থাকতে হবে রাজনীতির মধ্য দিয়ে আমরা জনগণকে কী দিতে পারলাম। মানুষকে কী দিতে পারলাম এবং আমাদের মা-বোনেরা, তাদের কাছে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের যেতে হবে। তাদের জন্য আমরা যে কাজগুলো করেছি সেগুলো তাদের বলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার সরকারের আমলে দেশে নারীর ক্ষমতায়নের খণ্ডচিত্র তুলে ধরে বলেন, প্রথম সচিব, মহিলা পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, আর্মি, নেভি, এয়ার ফোর্সে প্রথম নারী সদস্যদের তার সরকারই নিয়োগ প্রদান করে। শুধু তাই নয়, মহিলা বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, হাই কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের জজ হিসেবেও নারীদের নিয়োগ করা হয়। স্থানীয় সরকারের সকল পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদে বর্তমানে ২১ জন সরাসরি নির্বাচিত নারী সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনে ৫০ জন প্রতিনিধি রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে বলেন, তারা বিগত নির্বাচনের আগে ও পরে আন্দোলনের নামে সারা দেশে ৩ হাজার ৩৩৬ জন অগ্নিদগ্ধ এবং সাড়ে ৩০০ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করে। স্কুলছাত্র, ৬ বছরের শিশু রুপা, অন্তঃসত্ত্বা নারী মনোয়ারা, স্কুলশিক্ষিকা শামসুন্নাহার ঝর্ণা, বহু বাসযাত্রী ও চালক বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস থেকে রেহাই পায়নি।

সর্বশেষ খবর