রবিবার, ৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদন

বিচারবহির্ভূত হত্যাই বাংলাদেশে বড় সমস্যা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে বাংলাদেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এর পেছনে সরকারের মদদ রয়েছে বলেও ইঙ্গিত করা হয়েছে।  গতকাল (মার্কিন সময় অনুসারে শুক্রবার) প্রকাশ হওয়া ২০১৬ সালের বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া অবৈধভাবে আটক, সরকারি বাহিনীর হাতে গুম, জঙ্গিদের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড, বাল্যবিবাহ, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, শ্রমিকদের জন্য অনিরাপদ কর্মপরিবেশের বিষয়টিও উদ্বেগজনক বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়েছে, অসাম্প্রদায়িক, বহু মতের সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বেসামরিক প্রশাসনের ‘কার্যকর নিয়ন্ত্রণ’ রয়েছে। এরপর জঙ্গিবাদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে গুলশান হামলাসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সঙ্গে আইএস-আল-কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর যোগাযোগ রয়েছে বলে মনে করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বলা হয়, বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনগুলোর তত্পরতা বেড়েছে, যারা নিজেদের দায়েশ (আইএস) ও আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার সহযোগী বলে দাবি করে। জঙ্গি দমনে কঠোর অবস্থান নেওয়া বাংলাদেশ সরকারের র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে শীর্ষ কয়েকজন জঙ্গিনেতা মৃত্যুর বিষয়েরও সমালোচনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, অভিযানের কারণে বিচারবহির্ভূত হত্যা বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে আটক করে অর্থ দাবির ঘটনাও ঘটছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। এক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ খুবই সীমিত। এসব ঘটনার ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের দায় মুক্তি দেওয়া হচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ। এই হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনাগুলোর তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ সীমিত। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আস্থাহীনতার কারণে জনগণ অনেক সময়েই তাদের শরণাপন্ন হয় না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে ‘ভিকটিমদের’ দায়ী করে সরকারের বক্তব্যের সমালোচনাও করা হয়েছে, যা প্রকারান্তরে অভিযুক্তদের দায়মুক্ত করছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের দুর্বলতা এবং বিচার ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে আটকের বিষয়টিও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতার কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। এ ছাড়া অনলাইনে মত প্রকাশ এবং এনজিওগুলোর কাজে নিয়ন্ত্রণ আরোপকেও দেখানো হয়েছে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে।

সর্বশেষ খবর