সোমবার, ৬ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

নতুন সম্পর্কে ঢাকা-ওয়াশিংটন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

নতুন সম্পর্কে ঢাকা-ওয়াশিংটন

নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্কের আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ। নতুন দায়িত্বে আসা মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম ই টড-এর গতকালের ঢাকা সফরের মাধ্যমে এ আলোচনা শুরু হয়েছে। এটাই ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো প্রতিনিধির প্রথম ঢাকা সফর। প্রথম সফরে এসেই বাংলাদেশের সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে গেছেন পেশাদার এ কূটনীতিক। বাংলাদেশ নিয়ে ওবামা প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা নিশা দেশাই বিসওয়ালের জায়গায় ট্রাম্প প্রশাসনে দায়িত্ব পেয়েছেন টড। তাই প্রথম সফরেই বাংলাদেশের বাণিজ্যিক, সামরিক ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন সহকারী মন্ত্রী। শনিবার গভীর রাতে ঢাকায় পৌঁছেন টড এবং তারপর থেকে ব্যস্ত সময়সূচি শেষে গত রাতেই ঢাকা ত্যাগ করেছেন। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আগের সব ইস্যুর পাশাপাশি বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আগ্রহের কথা জানানো হয়েছে উইলিয়াম টডকে। নতুন সম্পর্কের জন্য পরবর্তী আলোচনার কথা বলে গেছেন মার্কিন কূটনীতিক। এর মাধ্যমে এতদিনের নানান জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটবে বলে আশা করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

জানা যায়, পেশাদার কূটনীতিক উইলিয়াম টড গতকাল ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক (অব.), বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মাহবুব উজ জামানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব আলোচনায় সার্বিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনের বিষয়ে সহযোগিতা, বাণিজ্য, জিএসপি ইস্যু, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার ইস্যু, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি, পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত আনা প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেছেন, এখন পর্যন্ত ওয়াশিংটনে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক নতুন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ হয়নি। ফলে নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় নীতি প্রণয়নে উইলিয়াম টড মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছেন। তাই নিয়মিত সফরের অংশ হিসেবে উইলিয়াম টড ঢাকায় এসেছেন। তার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয় নিয়েই পর্যালোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তরফে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সহায়তা দেওয়ার বিষয় অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ সাত বিলিয়ন ডলার। তার মধ্যে ছয় বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এটা আরও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের দাবিটি জোরালোভাবে ফের উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ওই সুবিধা চায়। সুবিধাটি পেলে দুই দেশের বাণিজ্য আরও বাড়বে। বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ২০১৩ সালে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দফতর (ইউএসটিআর) সেই সুবিধা স্থগিত করে। সুবিধাটি পুনর্বহাল বা ফেরতে গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকা-ওয়াশিংটন দরকষাকষি চলছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানের জন্য সব শর্তই পূরণ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের মনোভাব খানিকটা হলেও বুঝতে পারাটাই ছিল টড-এর সফরের মূল পাওয়া। এতে ওয়াশিংটনের নতুন প্রশাসন আগের মতোই বিস্তৃত সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ যে নতুন করে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও অন্যান্য ইস্যুর পাশাপাশি বাণিজ্যকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় তা জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন প্রশাসনের এ ধরনের সফরের মূল কাজই হলো একে অপরের বক্তব্য জানা এবং শোনা। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের মনোভাব জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য রাখছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এক ধরনের বক্তব্য আমরা শুনছি, তার হোয়াইট হাউস থেকে এক ধরনের মনোভাব জানা যাচ্ছে, আবার তার ভাইস প্রেসিডেন্ট এক ধরনের কথা বলছেন। এর মধ্যে আসলে বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়া বা এশিয়া ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প আসলে কোন নীতি গ্রহণ করেন সেটা জানাটাই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাৎ হলেও এরপর আর কোনো অগ্রগতি সেভাবে দেখা যায়নি। আবার ভারত ও চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের নীতি নেন তাও জানার ইচ্ছা অবশ্যই আমাদের আছে। হুমায়ূন কবির বলেন, নতুন করে বাণিজ্যিক সম্পর্কগুলোকে সামনে রেখে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করাটাই বাংলাদেশের জন্য বিশেষ যুক্তিযুক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব বুঝতে পারার পর বাংলাদেশের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি বা বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বৃদ্ধির চেষ্টাই হবে নতুন চ্যালেঞ্জ।

সর্বশেষ খবর