শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

খাদিজা হত্যা চেষ্টায় বদরুলের যাবজ্জীবন

নারীরা এখনো অরক্ষিত : আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

খাদিজা হত্যা চেষ্টায় বদরুলের যাবজ্জীবন

নৃশংসতার সর্বোচ্চ শাস্তিই পেলেন বদরুল আলম। ঘৃণ্য অপকর্মের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন তিনি। সিলেট মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধার আদালত গতকাল বদরুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই মাসের দণ্ড দিয়েছেন। এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বদরুলের বর্বরতার শিকার খাদিজা ও তার আইনজীবী। তবে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানিয়েছে আসামিপক্ষ।

খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলায় বদরুলের কী সাজা হয় তা জানতে গতকাল সকাল থেকেই আদালতপাড়ায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। সকাল ১০টার দিকে বদরুলকে কড়া নিরাপত্তায় আদালতের পুলিশ কাস্টডিতে নিয়ে আসা হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় তাকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে তোলা হয়। জনাকীর্ণ আদালতে ১১টা ৩৩ মিনিট থেকে রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। প্রায় ২৬ মিনিট ধরে রায় পড়ে শোনান তিনি। বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে বদরুলের সাজা ঘোষণা করা হয়। আদালত স্পষ্ট ভাষায় বলে, ‘সাক্ষীদের সাক্ষ্য থেকে ঘটনার সঙ্গে আসামি বদরুলের সম্পৃক্ততা অবিশ্বাস করার মতো কিছু পাওয়া যায়নি। খাদিজাকে খুন করার পরিকল্পনা ছিল আসামির। রাষ্ট্রপক্ষ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।’ বিচারক পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘নারীরা এখনও অরক্ষিত। খাদিজার এ ঘটনা তা প্রমাণ করে। খাদিজাকে নৃশংসভাবে কোপানোর দায়ে নারী দিবসে আসামি বদরুলের যথোপযুক্ত শাস্তি নারীদের সুরক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’ রায় ঘোষণার পর আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘নারী দিবসে পুণ্যভূমি সিলেটের ইতিহাসে দণ্ডবিধির ৩২৬ ধারায় বদরুল আলমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এটি একটি মাইলফলক। এ রায়ে দেশ ও জাতি খুশি হয়েছে।’ খাদিজার আইনজীবী এ কে এম শিবলী বলেন, ‘আমরা রায়ে সন্তুষ্ট। এটি একটি যুগান্তকারী রায়। এ রায় মাইলফলক হয়ে থাকবে।’ রায়ের পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে খাদিজার চাচা ও মামলার বাদী আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করছি। আশা করছি, আসামিপক্ষ যদি উচ্চ আদালতে আপিল করে, তবে সেখানেও এ সাজা বহাল থাকবে।’ এদিকে গতকাল রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির ছিলেন খাদিজা। তবে রায় ঘোষণার পর নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এমন রায়ে আমি খুশি। আমি সবার প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। আমার মতো আর কোনো নারী যেন এমন নির্যাতনের শিকার না হন। আমি আমার জীবন নতুনভাবে গড়তে সব চেষ্টাই করব।’ বদরুলের বিরুদ্ধে এমন রায়ে সর্বস্তরের মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে খুশি হতে পারেননি বদরুলের আইনজীবী সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী। রায়ের পর তিনি বলেন, ‘আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারিনি। উচ্চ আদালতে আপিল করব, আশা করি সেখানে আমার মক্কেল খালাস পাবে।’ ‘নারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে’ এ রায় ঘোষণা করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গত বছর ৩ অক্টোবর এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজা বেগম নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র, শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম। ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা বদরুলকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। হামলার ঘটনায় খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস বাদী হয়ে বদরুলকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেন। ৫ অক্টোবর বদরুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ঘটনার পর শাবি থেকে বহিষ্কার করা হয় বদরুলকে। তার বিরুদ্ধে ৮ নভেম্বর দাখিল করা চার্জশিট ১৫ নভেম্বর গ্রহণ করেন আদালত। পরে ২৯ নভেম্বর চার্জ গঠন করা হয়। ৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় সাক্ষ্য গ্রহণ। এরপর ১১ ও ১৫ ডিসেম্বর এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। মামলার ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। ১ মার্চ মামলাটি সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। পরে ৫ মার্চ যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের তারিখ ধার্য করেন আদালত। এদিকে বদরুলের হামলায় গুরুতর আহত খাদিজাকে প্রথমে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর সাভারের সিআরপিতে নিয়ে যাওয়া হয় খাদিজাকে। ১ ফেব্রুয়ারি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন খাদিজা।

সর্বশেষ খবর