শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিদেশ যেতে ৯০ ভাগ পুরুষ কর্মী দুর্নীতির শিকার : টিআইবি

পাঁচটি ধাপে ১৬ ধরনের অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদেশ যেতে ৯০ ভাগ পুরুষ কর্মী দুর্নীতির শিকার : টিআইবি

বাংলাদেশ থেকে গত বছর মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাওয়া পুরুষ কর্মীদের মধ্যে ৯০ শতাংশই বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ার পাঁচটি ধাপে ১৬ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম হচ্ছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে গতকাল এসব জানিয়েছে। সংস্থাটির ধানমন্ডি কার্যালয়ে এ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান প্রমুখ। ‘শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সুশাসন : সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার মনজুর-ই-খোদা। ২০১৬ সালের মে থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত শ্রম অভিবাসন-সংশ্লিষ্ট নীতিমালা, আইন ও বিধি, প্রকাশিত-অপ্রকাশিত গবেষণা, প্রবন্ধ, সরকারি- বেসরকারি তথ্য ও দলিল এবং সংবাদপত্র ও অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ পর্যালোচনা করে এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অতিরিক্ত দালাল নির্ভরতা, সক্ষমতার ঘাটতি, চাহিদার তুলনায় অধিক গমনেচ্ছু এবং প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে শ্রম অভিবাসনে ইচ্ছুক ও প্রবাসী শ্রমিকরা আর্থিকসহ বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বিদেশে কর্মী পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটি দালালনির্ভর আখ্যা দিয়ে বলেন, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এজেন্টদের যেমন দায়বদ্ধতার মধ্যে আনা হয়, এ খাতেও তেমন বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘমেয়াদি কৌশল প্রণয়ন করার ওপরও জোর দেন তিনি। গবেষণায় শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ার ভিসা সংগ্রহ, ভিসা সত্যায়ন, কর্মীর কাছে ভিসা বিক্রি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ভিসা প্রক্রিয়াকরণসহ সব পর্যায়ে নানাবিধ সমস্যা, দুর্নীতি ও অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেদনে অভিবাসী কর্মীর কাছে দালালদের ভিসা বিক্রি; ভিসার জন্য অতিরিক্ত মূল্য আদায়; নারী অভিবাসী কর্মীদের কাছ থেকে রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালদের গড়ে ১০-১৫ হাজার টাকা আদায়; স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুস্থ ব্যক্তিকে আনফিট ঘোষণা করা, পরবর্তীতে টাকার বিনিময়ে ফিট বলে সনদ দেওয়া, পুলিশি ছাড়পত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৬ সালে বিভিন্ন দেশে ভিসা ক্রয় বাবদ পাঁচ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে বলেও নিজেদের পরিচালিত গবেষণায় উঠে আসার কথা বলছে এই সংস্থা। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে সৌদি আরব, বাহরাইন, ওমান, কাতার, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ থেকে মোট পুরুষ কর্মী গেছে পাঁচ লাখ ২৫ হাজার ৭৬৯ জন। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বিনামূল্যে নারী কর্মী পাঠানোর নিয়ম থাকলেও দালালরা জনপ্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা আদায় করে। বিদেশ গমনেচ্ছুদের পুলিশি ছাড়পত্র পেতে প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে হয়। এই ছাড়পত্র সংগ্রহের জন্য জনপ্রতি ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ পেয়েছে টিআইবি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে দলীয় ভিসার ক্ষেত্রে নিয়োগের অনুমতি নিতে একটি চক্রকে ভিসাপ্রতি ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বিএমইটি বহির্গমন ছাড়পত্রের অনুমোদন দিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভিসাপ্রতি টাকা আদায় করে। অভিবাসন কর্মীর চাহিদার চেয়ে বাংলাদেশে সরবরাহ বেশি। প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে কর্মীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন, দালাল নির্ভরতাকে নিয়ন্ত্রণ, প্রতারণা ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানান বক্তারা। শ্রম অভিবাসন খাতে বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে দাবি করে বিদেশ গমনেচ্ছুদের ভোগান্তির শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ করেছে টিআইবি। শ্রম অভিবাসন খাতে সুশাসন নিশ্চিতে বিদ্যমান আইনি কাঠামোর পরিবর্তন করার সুপারিশ করেছে টিআইবি। এ ছাড়া বিএমইটির ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’ কার্যকর করার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। টিআইবি বলছে, ‘পুরোপুরি দালালনির্ভর’ এ প্রক্রিয়ায় দালালদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা দরকার। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসানসহ অন্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর