শিরোনাম
রবিবার, ১২ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন

আবারও মোদি ম্যাজিকে বিজেপির জয়জয়কার

কলকাতা প্রতিনিধি

ভারতের পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বড় চমক দেখিয়েছে।

গত বছরের শেষ দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের নোট বাতিল ইস্যু নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু এসব জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে পাঁচ রাজ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে দলটি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। আর মণিপুর ও গোয়ায় কংগ্রেসের সঙ্গে দলটির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। তবে পাঞ্জাব রাজ্যে ক্ষমতাসীন আকালি দলের সঙ্গে দলটি জোট বাঁধলেও সেখানে কংগ্রেসের কাছে হারতে হয়েছে তাদের। দীর্ঘ এক মাসের ভোটগ্রহণ শেষে গতকাল এ পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়।

বিজেপিকে ঠেকাতে উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতাসীন সমাজবাদী পার্টি (এসপি) অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বে কেন্দ্রে বিরোধী দল ভারতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনে লড়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিজেপির বিশাল জয় ঠেকাতে পারেনি দলটি। রাজ্যের ৪০৩ আসনের মধ্যে বিজেপি ৩২৪টি আসনে জয়ী হয়। অথচ এ রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার মাত্র ২০২টি আসন। ফলে বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি উত্তরপ্রদেশে এককভাবে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। আর ক্ষমতাসীন এসপি ও কংগ্রেস জোট পেয়েছে মাত্র ৫৫টি আসন। উত্তরপ্রদেশের পার্শ্ববর্তী রাজ্য উত্তরাখণ্ডেও বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয়েছে। এ রাজ্যের ৭০টি আসনের মধ্যে সবগুলোরই ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। এর মধ্যে বিজেপি পেয়েছে ৫৭টি আর বিরোধী কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ১১টি আসন। ফলে উত্তরাখণ্ডেও এককভাবেই সরকার গঠন করবে বিজেপি। বাকি তিন রাজ্যের মধ্যে কেবল পাঞ্জাবে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে কংগ্রেস। ক্ষমতাসীন আকালি-বিজেপি জোটকে বেশ ভালোভাবেই হারিয়েছে তারা। রাজ্যের ১১৭টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে ৭৭টি। তবে এ রাজ্যের ফলাফলে হতাশ হয়েছে দিল্লিতে ক্ষমতাসীন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল আম আদমি পার্টি—এএপি। দলটি পেয়েছে ২০টি আসন। অথচ এখানে এএপি ভালো করবে বলে আশা করা হচ্ছিল।

অপর দুই রাজ্য মণিপুর ও গোয়ায় কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও কংগ্রেস উভয়টিতে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে রয়েছে। গতকাল সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মণিপুরে ৬০ আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে ২৮টি, বিজেপি পেয়েছে ২১টি ও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ১টি আসন। তবে এ রাজ্যে সবচেয়ে আলোচিত প্রার্থী ‘আয়রন লেডি’ হিসেবে খ্যাত ইরম শর্মিলা চানু পরাজিত হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস প্রার্থী ইবোবি সিংয়ের কাছে। চানু পেয়েছেন মাত্র ৯০ ভোট। তিনি জামানত হারিয়েছেন। হতাশ চানু রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মণিপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য কোনো দলের ৩১টি আসন দরকার। ফলে কংগ্রেস এ থেকে মাত্র ৩টি আসনে পিছিয়ে রয়েছে। আর বিজেপি শাসিত গোয়ায়ও এগিয়ে রয়েছে কংগ্রেস। সর্বশেষ খবর পর্যন্ত রাজ্যের ৪০ আসনের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে ২০টি আসন। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য কেনো দলের দরকার ২১ আসন। আর রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি পেয়েছে ১৩ আসন ও অন্য দলগুলো পেয়েছে বাকি ৭টি আসন। তবে কংগ্রেস এগিয়ে থাকলেও গোয়া এবং মণিপুরে বিজেপিই সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি অমিত শাহ। এক বিজয়ী বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি। নির্বাচনের ফলাফলকে তিনি নরেন্দ্র মোদির ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের জয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। উত্তরাখণ্ড ও উত্তরপ্রদেশে বিজেপির জয় উদযাপন করতে গতকাল দলটির সদর দফতরে কয়েকশ কর্মী-সমর্থক জড়ো হয়েছিল। তারা সেখানে অমিত শাহকে স্বাগত জানান।

মোদিই সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা : ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই যে দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা তা নির্বাচনের ফলাফলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন অমিত শাহ। তিনি আরও বলেন, ‘বিজেপির জন্য এই ফলাফল খুবই উৎসাহব্যঞ্জক; উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মণিপুর ও গোয়া-এ চার রাজ্যে আমরা সরকার গঠন করতে যাচ্ছি।’ ভোটে জনতার এ রায় দেশটির রাজনীতিকে নতুন দিকে নিয়ে যাবে বলেও জানান তিনি। উত্তরপ্রদেশে মোদিকে সামনে রেখেই প্রচারাভিযান চালিয়েছিল বিজেপি। এ রাজ্যে সাত দফায় নির্বাচন হয়। ফলে প্রথম দিককার ভোটে দলটির পারফরম্যান্স খারাপ হতে পারে এ চিন্তায় নির্বাচনের মাঝামাঝি সময়ে মোদিকেন্দ্রিক সমাবেশের সংখ্যা দ্বিগুণ করেছিল দলটি। এর ফলও পেল দলটি। উপরন্তু ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিজেপি সংখ্যালঘু অবস্থানে রয়েছে। সে জন্য মোদি সরকারের উত্থাপিত অনেক বিলই উচ্চকক্ষে প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। তাই উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে বড় জয় এবং মণিপুর ও গোয়ায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই রাজ্যসভায় বিজেপির অবস্থান শক্ত করতে সহায়তা করবে।

মুলায়মকে ফের নেতৃত্বে আনার দাবি : উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বিশাল জয়ের পরই পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। ফলাফল আসার পরপরই ৫ নম্বর কালীদাস মার্গে অখিলেশের বাসার সামনে সুনসান নীরবতা ছিল। মারাত্মক পরাজয়ে সমাজবাদী পার্টির তরফে অখিলেশের বাবা মুলায়ম সিংকেই ফের দলটির নেতৃত্বে আনার দাবি তুলেছেন অনেকে। আর রাজ্যে এই পরাজয় দলের জন্য একটা বড় আঘাত বলে স্বীকার করে নিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভি জানান, ‘উত্তরপ্রদেশে বিপর্যয় একটা বড় ধাক্কা। এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে দলের খোলনলচে বদলাতে হবে।’ অন্যদিকে নির্বাচনে পরাজয়ের পরই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এ কারচুপির অভিযোগ এনেছেন উত্তরপ্রদেশের চারবারের মুখ্যমন্ত্রী বহুজন সমাজ পার্টির নেতা মায়াবতী। তিনি বলেন, ইভিএমে অন্য দলের বোতাম টিপলেও সব ভোটই গেছে বিজেপির ঝুলিতে। গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে বিজেপি। অখিলেশও মায়াবতীর এ দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, গোয়া ও মণিপুরে বিধানসভা নির্বাচন শুরু হয় গত ৪ ফেব্রুয়ারি। শেষ হয় ৮ মার্চ। পাঁচ রাজ্যে ৬৯০টি আসনে ভোটার প্রায় ১৬ কোটি। দীর্ঘ এক মাস ধরে ভোটগ্রহণ শেষে গতকাল ফলাফল ঘোষিত হয়।

সর্বশেষ খবর