মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

শাহজালাল যেন ডাম্পিং স্টেশন

মাসের পর মাস ডজনখানেক বিমান পড়ে আছে, হুমকিতে কার্গো হ্যান্ডলিং

মির্জা মেহেদী তমাল

শাহজালাল যেন ডাম্পিং স্টেশন

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উড়োজাহাজের ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়েছে। দেশীয় ব্যক্তিমালিকানার চার এয়ারলাইনসের ডজনখানেক পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ মাসের পর মাস রানওয়েতে পড়ে থাকলেও এগুলো সরানোর কোনো উদ্যোগ নেই। এতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি কার্গো হ্যান্ডলিং পড়েছে হুমকির মুখে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিমানবন্দরের রানওয়ের পাশে কার্গো ভিলেজের কাছে দেশীয় এয়ারলাইনসের ১২টি উড়োজাহাজ পড়ে আছে গত কয়েক মাস ধরে। রপ্তানি ভিলেজের সামনে বন্ধ হয়ে যাওয়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের আটটি উড়োজাহাজ লাইন ধরে রাখা হয়েছে। একই স্থানে জিএমজির দুটি ও এশিয়া এয়ারওয়েজের রয়েছে একটি। এ ছাড়া স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইনসের একটি ভাড়া করা কার্গো উড়োজাহাজ আমদানি ভিলেজের কাছে পড়ে আছে মাসের পর মাস। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বার বার তাগাদা দেওয়া হলেও এয়ারলাইনসগুলো তাদের উড়োজাহাজ সরাচ্ছে না। চলতি মাসেই কার্গো নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনে ব্রিটিশ টিম ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। ঢাকায় তাদের পৌঁছানোর আগেই উড়োজাহাজগুলো না সরালে বাংলাদেশ কার্গো ফ্লাইটের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র জানায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পণ্য রাখার সুব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান আমদানি পণ্য। কার্গো ভিলেজ এবং পণ্য ডেলিভারি ব্যবস্থার উন্নয়ন না হওয়ায় চরম ভোগান্তি  পোহাতে হচ্ছে ব্যবহারকারীদের। নতুন করে অকেজো উড়োজাহাজগুলো কার্গো ভিলেজের সামনে ফেলে রাখায় আমদানি পণ্যের স্তূপের আকার বড় হচ্ছে। বিমানের একটি সূত্র জানায়, বেসরকারি এয়ারলাইনস কোম্পানির ১২টি উড়োজাহাজ রানওয়ের বিরাট এলাকা দখল করে রেখেছে। এতে বিমানের কার্গো হ্যান্ডলিং চরম বাধার সৃষ্টি করছে। রানওয়ে থেকে মালামাল সরানোর কাজ ধীরগতিতে করতে হচ্ছে। সূত্র জানায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ১২০টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। ব্যবহারকারীদের অভিযোগ চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গত তিন দশকে আমদানি কয়েকগুণ বাড়লেও কার্গো ভিলেজের সম্প্রসারণ হয়নি। অন্যদিকে নানা জঠিলতায় খালাস না হওয়া বিপুল পরিমাণ পণ্যের সময়মতো নিলাম না হওয়ায় স্তূপ জমেছে কার্গো শেডে। এ অবস্থায় রানওয়েতে খোলা আকাশের নষ্ট হচ্ছে আমদানি পণ্য। সরেজমিন কার্গো কমপ্লেক্সের রানওয়েতে গিয়ে দেখা গেছে, অ্যাপ্রোন কিংবা কোনো ধরনের পরিচয়পত্র ছাড়াই শত শত মানুষ কমপ্লেক্সে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। অনেকে কনটেইনার থেকে পলিথিন খুলে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ পচা-গলা কাপড়ের বান্ডিল, নষ্ট গার্মেন্ট সামগ্রী কুড়িয়ে নিচ্ছে। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিদেশ থেকে আসা মূল্যবান প্যাকেট-কার্টন ছিঁড়ে মোবাইল সেট, গার্মেন্ট সামগ্রী,  কেমিক্যাল বের করে ওই প্যাকেটে অন্য দ্রব্যসামগ্রী কিংবা নকল ও ভেজালসামগ্রী ঢুকিয়ে দিচ্ছে। প্রকাশ্যে এভাবে কার্টন খোলার ঘটনা ঘটলেও কেউ বাধা দিচ্ছে না। গ্রিন চ্যানেল গোডাউনে শুল্কমুক্ত মালামাল থাকার নিয়ম থাকলেও  সেখানে রাখা হচ্ছে শুল্কযুক্ত মালামাল। সময়মতো লোডার, ট্রলি, ফর্কলিফট না থাকায় সেসব মাল বের করা যায় না। নিয়ম অনুযায়ী টার্মিনালের লোডাররাই মালামাল বের করে  দেওয়ার কথা। কিন্তু সময়মতো কোনো লোডার পাওয়া যায় না। টাকা ছাড়া তারা কোনো কাজই করে না। অকেজো উড়োজাহাজকে কেন্দ্র করে সেখানে অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনাও ঘটছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশনস) উইং কমান্ডার জিয়াউল কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১২টি উড়োজাহাজ রানওয়ের একটি বড় অংশ দখল করে রেখেছে। ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসবিরুল আহমেদ  চোধুরি গতরাতে বলেন, তাদের এয়ারলাইন্স এর অপারেশন বন্ধ আছে। আর যে উড়োজাহাজ শাহজালালে আছে সেগুলো সব অকেজো নয়। আবার অপারেশনে তারা যাবে বলে সেগুলো এখানে আছে।

 সিভিল এভিয়েশন তাদের কোনো নোটিশ দেয়নি বলে দাবি করেন বন্ধ হয়ে যাওয়া এয়ারলাইন্সের এই কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর