মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

মালিবাগে ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে একজন নিহত, আহত ২

নিজস্ব প্রতিবেদক


মালিবাগে ফ্লাইওভারের গার্ডার পড়ে একজন নিহত, আহত ২

মালিবাগ রেলগেটে রবিবার রাতে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে পড়ে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর মালিবাগ রেলগেটে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে পড়ার ঘটনায় স্থানীয় পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমনকি মালিবাগ রেলগেট-মৌচাক সড়ক দিয়ে সব ধরনের যান চলাচলও বন্ধ ছিল। রবিবার রাত ২টার দিকে মালিবাগ রেলগেটে নির্মাণাধীন মগবাজার ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে পড়ে একজনের মৃত্যু এবং দুজন আহত হয়। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পরই খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে স্বপন (৪০), পলাশ বরণ ধর (৩৯) ও নুর নবী হেলালকে (৪৫) আহতাবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেকে পাঠিয়ে দেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৩টার দিকে মৃত্যু হয় স্বপনের। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার কুমারপুর গ্রামে। তিনি মালিবাগের একটি কাঠের দোকানে মিস্ত্রির কাজ করতেন।

আবদুল কুদ্দুস নামে তার এক সহকর্মী জানান, স্বপন দীর্ঘদিন মালিবাগ এলাকায় কাঠমিস্ত্রির কাজ করে আসছিলেন। দুর্ঘটনার রাতেই প্রথম তিনি ৫০০ টাকার বিনিময়ে চার ঘণ্টার চুক্তিতে ফ্লাইওভার নির্মাণকাজে যোগ দিয়েছিলেন।

স্বপনের মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এ ছাড়া নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার দুর্ঘটনার পর গতকাল মালিবাগ রেলগেট এলাকায় দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে মেয়র এসব কথা বলেন। গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদকে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. খলিলুর রহমান ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আলী নুর। তাদের আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢামেকে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় পলাশ বরণ ধর ও নুর নবী হেলালের দুটি পা-ই কেটে ফেলা হয়েছে। তারা দুজনই ফ্লাইওভার নির্মাণকাজে সংশ্লিষ্ট। পলাশ এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার জলদিতে। আর নুর নবী সেখানকার শাহ সিমেন্টের লরিচালক। তার বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া গ্রামে।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর পক্ষে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক থাকায় এখানে তিনি আসতে পারেননি। তার প্রতিনিধি হিসেবে আমি এখানে এসেছি। এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত। এ বিষয়ে আমি মাননীয় মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। মাননীয় মন্ত্রী এ ঘটনায় ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দোষী ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। কাউকে একবিন্দু ছাড় দেওয়া হবে না।’

কথা হয় স্থানীয় সাফেনা ডেন্টাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইসমত নামে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায়ই এই নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে মৌচাকে যাওয়া-আসা করি। পরপর দুটি ঘটনায় এখন এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে আমাদের ভয় লাগছে। এর আগেও কনফিডেন্স টেইলার্সের সামনে গার্ডার তোলার সময় একটি ক্রেন উল্টে গিয়েছিল।’

ঘটনার বর্ণনায় লিটন নামে এক শ্রমিক জানান, মাঝরাতে দুটি গার্ডার রেলগেটের দক্ষিণ পাশের ও উত্তর পাশের দুটি পিলারের ওপর তোলা হয়। উত্তর পাশের পিলারের মাঝখানে থাকা রডের মাথার সঙ্গে গার্ডার দুটি তার দিয়ে বাঁধা ছিল। ওই পিলারের নিচে পলাশ টর্চলাইট হাতে সিগন্যালের কাজ করছিলেন। স্বপন আর নুর নবী পাশে দাঁড়িয়ে গার্ডার ওঠানোর কাজ দেখছিলেন। যখন গার্ডার বেঁধে রাখা তার গ্যাসের আগুন দিয়ে কেটে দেওয়া হয়, তখন তা একদিকে হেলে নিচে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে একটি গার্ডারের নিচে চাপা পড়েন স্বপন। এ সময় কোমরে গার্ডারের রড বিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। অন্য দুজনের পা ভেঙে যায়। তাদের ফায়ার সার্ভিসের লোকজন উদ্ধার করে ঢামেকে পাঠিয়ে দেন। পরে গার্ডারের রড কেটে স্বপনকে বের করা হয়। রেললাইনের ওপর গার্ডারটি থাকায় সকাল পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষের পরিদর্শক পলাশ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা রাত পৌনে ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে যাই। আর ভোর সোয়া ৬টার দিকে ফিরে আসি। এ সময় আমরা দুজনকে আহতাবস্থায় এবং একজনকে মৃত উদ্ধার করি।’

 

সর্বশেষ খবর