মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সাহায্য চায় পুলিশ

দেশে আইএস নেই : আইজিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সাহায্য চেয়েছে পুলিশ। ইন্টারপোল থেকে কোনো অপরাধীর নাম প্রত্যাহার করাও বাংলাদেশ সরকার ভালোভাবে দেখে না বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক। ঢাকায় ১৪ দেশের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গতকাল তিনি এসব কথা বলেন। গুলশানের হলি আর্টিজানের হামলার ঘটনায় আইএস জড়িত বলে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স অ্যান্ড টেররিজম রিসার্চের (আইসিপিভিটিআর) পরিচালক রোহান গুণারত্নের দেওয়া বক্তব্য সমর্থনযোগ্য নয় বলেও মন্তব্য করেন আইজিপি।

তিন দিনব্যাপী হোটেল সোনারগাঁওয়ে চিফস অব পুলিশ কনফারেন্সের দ্বিতীয় দিনের সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশগুলো ইন্টেলিজেন্স, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে চ্যালেঞ্জ দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধানে অভিমত দিয়েছে। সম্মেলনে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে ঢাকায় ইন্টারপোলের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অফিস করার আহ্বান করা হয়। যেসব দেশে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও ২১ আগস্ট হামলা মামলার পলাতক আসামি রয়েছে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ইন্টারপোল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান, রিজার্ভের অর্থ ফেরত নিয়ে আলোচনা ও জঙ্গিসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ কমিয়ে আনতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। বাংলাদেশের পুলিশপ্রধান ইন্টারপোলের মহাসচিব জারগেন স্টক, মালয়েশিয়া পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল খালিদ বিন আবু বকর, মিয়ানমার পুলিশের চিফ অব জেনারেল স্টাফ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মায়ো সু উইন, আফগানিস্তানের সিনিয়র ডেপুটি মিনিস্টার ফর সিকিউরিটি আবদুল রহমান রহমান, ফেসবুকের ট্রাস্ট অ্যান্ড সেফটি ম্যানেজার বিকরাম লিনজিদসহ চীন এনসিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট, কোরিয়ান পুলিশের চিফ সুপারিনটেনডেন্ট জেনারেল, শ্রীলঙ্কা পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেলের সঙ্গে বৈঠক করেন। সম্মেলনে অংশ নেন ১৪টি দেশের ৫৮ জন পুলিশপ্রধান ও ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা। সম্মেলনে ৪টি অধিবেশনে ১২টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। বক্তারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ কে এম শহীদুল হক ‘চরমপন্থা প্রতিরোধে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ দমনে কমিউনিটির অংশগ্রহণ একটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে। জঙ্গিবাদকে কঠোরভাবে নির্মূল করতে প্রচারণা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। র‍্যাব ডিজি বেনজীর আহমেদ তার প্রবন্ধে বলেন, সন্ত্রাসীরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের সংগঠনে নিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এটি রাজনৈতিক, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের জন্যও একটি বিশাল হুমকি। ইন্টারপোল ও ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে পুলিশপ্রধান বলেন, অনেক সময় লাল ফিতার দৌরাত্ম্যের কারণে আসামিকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। কিন্তু বিভিন্ন দেশের পুলিশপ্রধানদের সঙ্গে আমাদের ‘ওয়ান টু ওয়ান’ যোগাযোগ থাকলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিলম্ব হতে হয় না। জানা যায়, ইন্টারপোল মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনাকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আলোচনা হয়। পলাতক খুনিরা হলো লে. কর্নেল নূর চৌধুরী, লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী, লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল আ. রশিদ, ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন। এ ছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পলাতক আসামিদের ফেরত আনার বিষয়েও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় গুরুত্ব পায় মাদক চোরাচালান। বিশেষ করে ইয়াবা চোরাচালান সংক্রান্ত বিষয়। দুই দেশের মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যু এবং এর সমাধান নিয়ে আলোচনা হয়। বর্ডার এলাকায় প্যাট্রোল ডিউটি আরও বাড়ানোর বিষয়েও দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত দেওয়া নিয়ে ও বিদ্রোহী দমনে বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে শ্রীলঙ্গা পুলিশের অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হয়। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের নামে রেড নোটিস জারির বিষয়েও ইন্টারপোলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে ১১ ফেব্রুয়ারি রেড নোটিস জারির জন্য ইন্টারপোলে পাঠানো হয়। ওই বছরের ১৩ এপ্রিল নোটিসটি প্রকাশ করে ইন্টারপোল।

২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি নোটিসটি মুছে ফেলে ইন্টারপোল। এর মধ্যে আরেকটি আদালত তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০  কোটি টাকা জরিমানা করে।

সর্বশেষ খবর