বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
ভারত সফর শুরু ৭ এপ্রিল

বিশ্বাস-বন্ধুত্ব বাড়বে শেখ হাসিনা ও মোদির

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৭ এপ্রিল ভারত সফরে যাচ্ছেন। গতকাল ঢাকা ও দিল্লি যৌথ ঘোষণায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ সফরের কথা বলা হয়। ঘোষণায় আরও বলা হয়, ৭ থেকে ১০ এপ্রিল ভারতে সফরের সময় ৮ এপ্রিল বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর মাধ্যমে প্রায় ১০ বছর পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সফরে যাচ্ছেন ভারতে। যৌথ ঘোষণায় দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হয়েছে।

ঘোষণায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৭ থেকে ১০ এপ্রিল ভারতে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন।

 ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে এ সফর। নয়াদিল্লিতে ৮ এপ্রিল দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ ২০১০ সালে ভারতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় সফরের ৭ বছর পর এবং ২০১৫ সালে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের দুই বছর পর এ সফর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ সফরের মাধ্যমে প্রতিবেশী দুই দেশের আন্তরিক ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের ব্যাপ্তি বাড়ার পাশাপাশি দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দৃঢ় বন্ধুত্ব ও বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে ওঠার আশা করা হচ্ছে।’

ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার তার সফরে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে অবস্থান করবেন। এর আগে ভারতে এমন উদাহরণ দেখা যায়নি। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির আগ্রহেই তিনি সেখানে অবস্থান করবেন। সফরের প্রথম দিনই প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন শেখ হাসিনা। সফরকালে দুদেশের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে আজমীর শরিফে গিয়ে হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির (রহ.) মাজার জিয়ারত করতে পারেন। এ সফরে দুই দেশের মধ্যে প্রায় দুই ডজন চুক্তি, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। এর মধ্যে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে কোনো চুক্তি নয়, বরং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। এই স্মারকে দুদেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে প্রশিক্ষণ, সফর বিনিময়, যৌথ মহড়া, দুর্যোগ মোকাবিলা এবং জঙ্গি দমনে সহায়তার মতো উপাদান থাকছে। তবে এই সমঝোতা স্মারকটির কোনো মেয়াদকাল থাকছে কিনা সে বিষয়ে আরও আলোচনা করে ঠিক করা হবে। এ ছাড়া ভারত থেকে সমরাস্ত্র ক্রয় করার জন্য ভারত ৫০ কোটি ডলারের একটি ঋণ প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারে। এ লক্ষ্যে দুদেশের মধ্যে ‘লাইন অব ক্রেডিট’ (এলওসি) দেওয়া সংক্রান্ত আরেকটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরেও তিস্তাচুক্তি সই অনিশ্চিতই থাকছে। গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পে সহায়তা নিয়ে আরও সমীক্ষার কথা বলা হতে পারে। পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই হবে। এ ছাড়া কানেকটিভিটি নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা হবে। সফরের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে সোমবার পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। পরে সাংবাদিকরা সফরের এজেন্ডা ও ইস্যু কী কী থাকছে—জানতে চাইলে শ্রিংলা বলেন, ‘এ ধরনের সফরে আমরা অনেক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করি। আমাদের মধ্যে প্রতীকী ইস্যু আছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমরা উভয়ে একসঙ্গে যুদ্ধ করেছি। বাংলাদেশের মাটিতে অনেক ভারতীয় সৈন্য প্রাণ দিয়েছেন। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দুদেশের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করছেন। আমরা কীভাবে তাদের সম্মান জানাতে পারি, তারা কীভাবে আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন, তারা কীভাবে আমাদের দুদেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখবেন—এসব ইস্যু নিয়ে আলোচনা করছি। আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে কীভাবে কাজ করতে পারি। অবশ্যই এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের সফরে বাণিজ্যসংশ্লিষ্ট উপাদান থাকে। শীর্ষ ব্যবসায়ীরা কীভাবে একে অন্যের দেশে বিনিয়োগ করতে পারেন, বাণিজ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার কী কী ক্ষেত্র আছে—এসব ইস্যু আমরা দেখছি। সফরের মাধ্যমে এসব ক্ষেত্রে কীভাবে সহযোগিতা জোরদার হতে পারে এসবই আমরা দেখছি।’

সর্বশেষ খবর