শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই

জুলকার নাইন

জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই

ইশফাক ইলাহী চৌধুরী

ঢাকায় উত্তরার কাছাকাছি র‍্যাবের নির্মাণাধীন সদর দফতরে আত্মঘাতী হামলাকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের নতুন মাত্রা বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী এনডিসি, পিএসসি। তিনি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত এক বছরে বেশকিছু প্রশংসনীয় কাজ করেছে। তারা পরিস্থিতির উত্তরণও ঘটিয়েছে বেশ দ্রুত। কিন্তু সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় একাধিক পদাধিকারী দেশে বর্তমানে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই বলে মন্তব্য করেছিলেন। পরপর বেশকিছু সফল অভিযানের কারণে হয়তো তাদের মধ্যে কিছুটা আত্মতুষ্টির মতো মনোভাব চলে এসেছিল। কিন্তু এখন প্রমাণ হলো, জঙ্গিবাদের মতো দীর্ঘস্থায়ী সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই।’ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গবেষণায় যুক্ত ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘পরপর কয়েকটি জঙ্গি আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর কোণঠাসা হয়ে পড়া উগ্রবাদীরা সম্ভবত বড় কোনো হামলার পরিকল্পনা করেছিল। জঙ্গিবাদী বা সন্ত্রাসবাদীরা সব সময়ই বড় জনগোষ্ঠীকে ভীত করতে এমন টাগের্েট হামলা চালিয়ে থাকে। আর পুলিশ বা র‍্যাবের কোনো ক্যাম্প বা থানায় হামলা চালালে আলোড়ন হবেই, অন্য সবার মতো জঙ্গিরাও তা জানে। সে হিসেবেই হয়তো র‍্যাবের ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আত্মতুষ্টির যেমন সুযোগ নেই তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো দায়িত্ব পালনে ‘শিথিলতা’ দেখিয়েছে এও বলা উচিত হবে না। কারণ আত্মঘাতী হামলাকারীরা সাধারণত যত বেশি সম্ভব ক্ষতি করার টার্গেট নিয়ে থাকে। বেশিসংখ্যক র‍্যাব সদস্য উপস্থিত আছেন এমন স্থানে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়তো ওই হামলাকারীর উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি কারণ সেখানে কর্তব্যরত র‍্যাব সদস্যরা তাকে হামলার আগেই চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পেরেছিলেন। ফলে দেশ বড় কোনো ক্ষতি থেকে রক্ষা পেল।’ নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণার পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়া প্যাসিফিকের রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করা ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ কোনো দেশেই হুট করে পুরোপুরি বন্ধ বা নির্মূল করা সম্ভব নয়। কারণ, উগ্রপন্থিরা এসব হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞকে মতাদর্শভিত্তিক সংগ্রাম মনে করে। তাই যত দিন তাদের রিক্রুট বন্ধ না হবে, তত দিন জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই বলার কোনো সুযোগ নেই। শুধু বাংলাদেশে নয়, পুরো বিশ্বেরই এক নম্বর চ্যালেঞ্জ এই জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো, এ ধরনের আত্মঘাতী হামলা আগে আফগানিস্তান, পাকিস্তানের মতো দেশগুলোয় হতো, এখন বাংলাদেশে হচ্ছে।’ তবে র‍্যাবের ক্যাম্পে এই আত্মঘাতী হামলায় দেশবাসীকে আতঙ্কিত বা উদ্বিগ্ন হয়ে ভীত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইশফাক ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষের জন্য শঙ্কার বিষয়। এ ধরনের চোরাগোপ্তা জনবিচ্ছিন্ন হামলা চালানোর উদ্দেশ্যই হলো, জনসাধারণের জন্য ভীতসন্ত্রস্ত পরিবেশ তৈরি করা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ এবং সামাজিক আন্দোলন ছাড়া তরুণ সমাজের এ ধরনের বিপথে যাওয়া ঠেকানো যাবে না। তাই জনগণকে সজাগ থাকতে হবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। আর সরকারকে অবশ্যই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দলমতনির্বিশেষে সবাইকে একত্রিত করতে হবে। আরও অনেক বিস্তৃত পরিসরে প্রকৃত ইসলামের বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে ইসলামী সংগঠন, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও সমাজের শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে।’ এই চ্যালেঞ্জ এখন না নিতে পারলে ভবিষ্যতে হয়তো আরও কোনো খারাপ পরিস্থিতি দেখতে হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন এয়ার কমডোর ইশফাক ইলাহী চৌধুরী।

সর্বশেষ খবর