শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

সম্পর্কোন্নয়নে তিস্তা চুক্তি জরুরি

কলকাতা প্রতিনিধি

সম্পর্কোন্নয়নে তিস্তা চুক্তি জরুরি

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে তিস্তা চুক্তির নিষ্পত্তি করা জরুরি বলে মনে করেন পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। গতকাল বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশুদিবস উপলক্ষে কলকাতা ডেপুটি হাইকমিশনের উদ্যোগে কলকাতার স্মিথ লেনে অবস্থিত ‘বেকার হোস্টেলে’ এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বিমান বসু এ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশী এ দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে দুই দেশকেই সমান উদ্যোগ নিতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে অবশ্যই তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির নিষ্পত্তি করা উচিত।’

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বহু বকেয়া সমস্যা মিটলেও এখনো কাঁটা হয়ে রয়েছে তিস্তা। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকায় সফরসঙ্গী হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে সফর বাতিল করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি। এরপর দুই দেশের তরফে বহুবার একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবে রূপ পায়নি। এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠানে সে দেশ সফর করেন মমতা। এরপর ওই বছরের মে মাসেই ভারতের সংসদে স্থলসীমান্ত চুক্তি সংশোধনী বিল পাস হয়। এর পরই জুন মাসে ঢাকায় যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই সফরে সঙ্গী হন মমতা। কিন্তু আটকে রয়েছে তিস্তা। যদিও ঢাকা সফরে গিয়ে দুবারই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তিস্তার জট কাটার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। এরই মধ্যে আগামী এপ্রিলই ভারত সফরে আসছেন শেখ হাসিনা। হাসিনার এই সফরে দুদেশের মধ্যে একাধিক চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সবচেয়ে বেশি নজর থাকবে অমীমাংসিত তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়টি। আর তার আগেই তিস্তার সমস্যা মিটিয়ে ফেলার ব্যাপারে বিমান বসুর এ মন্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

এদিনের অনুষ্ঠান থেকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে বিমান বসু বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে চেনে-জানে কিন্তু এপার বাংলায় বঙ্গবন্ধুকে সেভাবে চেনে না। সে কথা মাথায় রেখে কলকাতার বেকার হোস্টেলে যে ঘরে বঙ্গবন্ধু থাকতেন সেখানে তাঁর স্মারক তৈরি করে এপার বাংলার মানুষদের বঙ্গবন্ধুকে চেনা-জানার ক্ষেত্রে একটা সুযোগ ও বাস্তব সুবিধা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ সরকারের এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানাই। আমিও গত বছর ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর সংগ্রহশালায় গিয়েছিলাম সেখানে গিয়ে তাঁর যে বর্ণনা শুনলাম তা সত্যিই ভয়ঙ্কর ব্যাপার।’ এদিন সকালেই বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তিতে ফুলের মালা দিয়ে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিমান বসু ও কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার জকি আহাদ। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন হাইকমিশনের অন্য কর্মকর্তারা। ছাত্রাবস্থায় বেকার হোস্টেলের যে ঘর দুটিতে বঙ্গবন্ধু থাকতেন সেই ২৩ ও ২৪ নম্বর ঘর দুটিও ঘুরে দেখেন তাঁরা। জকি আহাদ বলেন, ‘আজ থেকে ৯৭ বছর আগে ১৯২০ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেন। এই বেকার হোস্টেল তার ঐতিহ্যমণ্ডিত একটি স্থান, যেখানে থেকে বঙ্গবন্ধু লেখাপড়া করেছিলেন, আন্দোলন চালিয়েছিলেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা করার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সেই স্বপ্নও এখানে বসে দেখেছিলেন। আজ তাঁর জন্মদিনে সেই বেকার হোস্টেলে আজ সমবেত হয়েছি। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের এই উন্মাদনা, উচ্ছলতাকে বুকে ধরে আমরা চাই সামনের দিনগুলোতে এগিয়ে যেতে এবং আমরা চাই তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে যেন সর্বোচ্চ স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়।’

সর্বশেষ খবর