রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

জঙ্গিবিরোধী কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের স্থান হবে না। এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে।

গতকাল বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

শিক্ষক, অভিভাবক, মসজিদের ইমাম, ওলামায়ে কেরামসহ জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারও ছেলেমেয়ে যেন এই জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়।সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, কী করে তার খবর রাখতে হবে। মাদকাসক্তি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ থেকে নিজ নিজ সন্তানকে দূরে রাখতে হবে। তারা যেন ভবিষ্যতে এই দেশ পরিচালনার মতো উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে তার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি দেশবাসী এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গি তৎপরতা আছে কিনা সে সম্পর্কে তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেওয়ার অনুরোধ করেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, দেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বিএনপির সৃষ্টি। ক্ষমতায় থাকতে তারা বাংলা ভাই সৃষ্টি করে পুলিশ পাহারায় তাদের সন্ত্রাস চালাতে সহযোগিতা করেছে। একই দিনে ৫০০ স্থানে বোমা হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, দশ ট্রাক অস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাচালানের সঙ্গে বিএনপি নেতারা যে জড়িত ছিলেন তা প্রমাণিত হয়েছে। আর দেশ থেকে অর্থ পাচারের ঘটনায় বিএনপি নেত্রীর পুত্রের সাজা হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থেকে এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন বিএনপি নেত্রী। এখন মামলা মোকাবিলা করতে তিনি ভয় পান। আদালত থেকে পালিয়ে বেড়ান। পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমাদের অনেক ভয়-ভীতি দেখানো হলো। মিথ্যা অভিযোগ তুলে ভয় দেখাবে, আমি শেখ মুজিবের সন্তান। তাই তাদের (বিশ্বব্যাংক) সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করি। পরে কানাডার ফেডারেল কোর্টের রায়েই বেরিয়েছে যে পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুয়া। তিনি বলেন, সততা ও নিষ্ঠার শক্তি আছে বলেই যে কোনো অবস্থা আমরা মোকাবিলা করতে পারি। তাই যে যতই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র করুক, বাংলাদেশ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই।

প্রধানমন্ত্রী সুশীল সমাজের কিছু প্রতিনিধির ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, কিছু মানুষ আছে তারা নাকি দেশে গণতন্ত্র দেখতে পান না। দেশের এত উন্নয়ন-অগ্রগতি অস্বীকার করতে না পারলেও তারা বলার চেষ্টা করেন যে উন্নয়ন হচ্ছে, তবে গণতন্ত্র থাকতে হবে। তিনি বলেন, আসলে এসব লোকেরা মার্শাল ল ও কারফিউ-এর মধ্যে গণতন্ত্র দেখেন। দেশে গণতন্ত্র আছে বলেই এত উন্নয়ন ও অগ্রগতি হচ্ছে। শেখ হাসিনা এ সময় ভারতকে নিয়ে এক শ্রেণির রাজনীতিক ও মানুষের দ্বৈতনীতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ক্ষমতায় থাকতে ভারতের তোষামোদি, আর বিরোধী দলে গেলে ভারত বিরোধিতা- দীর্ঘ ২১ বছর ধরে মানুষ দেখেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল বলেই গঙ্গা ও শান্তিচুক্তি হয়েছে, দুই দেশের সীমান্ত চুক্তি হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে ভারত ও মিয়ানমার থেকে সমুদ্রসীমার ন্যায্য অধিকার আদায় করা সম্ভব হয়েছে। তিনি এ সময় প্রশ্ন রেখে বলেন, আওয়ামী লীগ এসব পারলে জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ারা পারেননি কেন? আসলে তারা ক্ষমতায় থেকে দেশের কোনো সমস্যারই সমাধান করতে পারেননি। উল্টো তারা দেশকে পিছিয়ে দিয়ে গেছেন। ছিটমহল বিনিময় প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে ছিটমহল সমস্যা নিয়ে যুদ্ধ বেধেই আছে। একমাত্র বাংলাদেশই আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভারতের সঙ্গে জনগণ ও সীমানা বিনিময় করতে সমর্থ হয়েছে। বিশ্বে এটা বিরল দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা কোনো দিন স্বাধীনতা পেতাম না। বঙ্গবন্ধু যদি আর পাঁচটা বছর বেঁচে থাকতেন, তবে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত-সমৃদ্ধ হতো। দেশের সব সমস্যার সমাধান হতো। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোশতাক ও জিয়াউর রহমানের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট কেবল বঙ্গবন্ধুকে নয়, তিনটি বাড়িতে একযোগে হামলা করে বঙ্গবন্ধু পরিবারের ১৮ জনকে হত্যা করা হয়। এরপরই শুরু হয় হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। ১৫ আগস্টের পর পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা দেশের ওপর কালো ছায়া ফেলেছিল। ২০২০ সালে জাতির পিতার শততম জন্মবার্ষিকী পালনে এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, গোলাম মাওলা নকশাবন্দী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, রফিকুল ইসলাম, এ কে এম রহমত উল্লাহ, সাদেক খান, শাহে আলম মুরাদ।  হাছান মাহমুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করেন আহকাম উল্লাহ। আলোচনা সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত থাকলেও বক্তৃতা করেননি।

 

সর্বশেষ খবর