মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফের আলোচনায় বিদেশি নিরাপত্তা

নতুন করে অস্ত্রধারী আনসার নিয়োগে দূতাবাসগুলোর আবেদন, উদ্বেগ কাটাতে আজ বৈঠক

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

চট্টগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশি নাগরিকদের ওপর হামলার শঙ্কা জানিয়ে পুলিশের বক্তব্য প্রকাশের পর ফের আলোচনায় এসেছে বিদেশিদের নিরাপত্তার বিষয়টি। গুলশান বনানী ও বারিধারায় নতুন করে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কয়েকটি দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক সংস্থা  নিরাপত্তার বিশেষ সতর্ক বাড়তি সশস্ত্র আনসার নিযুক্ত করার আগ্রহ দেখিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছে। তাদের উদ্বেগ নিরসনে আজ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বিশেষ বৈঠকের আয়োজন করেছে সরকার। বৈঠকে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বিদেশিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা শুনবেন এবং সরকারের গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের জানাবেন। সেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধিরাও। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, গত বছর থেকে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশিদের নিরাপত্তা দেওয়ার বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া আছে। কিন্তু কয়েকদিন আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেই বিদেশিদের নিরাপত্তা আরও জোরদারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গোয়েন্দা তথ্যের কথা জানানো হয় বিদেশি দূতাবাসের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। কূটনৈতিক জোন এবং বিদেশিরা অবস্থান করেন এমন সব হোটেল ও রেস্টুরেন্ট, বিমানবন্দরের মতো স্থানে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়। দূতাবাসগুলোও নিজেদের মতো করে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় দুটি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। ফলে উদ্বেগ বেড়ে যায় বিদেশি নাগরিকদের। অবশ্য ‘শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়’—এমন বাস্তবতায় গত কয়েক মাস ধরেই নিজেদের কর্মসূচি ও চলাচল নিয়ে খানিকটা গোপনীয়তা ও সতর্কতা বজায় রাখছে বিদেশি দূতাবাসগুলো। এমনকি বিদেশি মন্ত্রী বা উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সফরের কথাও আগে ঘোষণা করা হচ্ছে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর, আজ বিকালে মূলত জাপানের জাইকার প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করার কথা সরকারি কর্মকর্তাদের। স্বরাষ্ট্র সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে সেখানে উপস্থিত থাকবেন পুলিশের আইজিপি, র‍্যাবের ডিজি, ডিএমপি কমিশনার ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা। জাপানের সাহায্য সংস্থা জাইকা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে সহায়তা করছে। বর্তমানে বাংলাদেশে জাইকার বিনিয়োগ প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্প দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসব প্রকল্পে জড়িত রয়েছেন জাপানের প্রকৌশলীসহ বিশাল একটি দল। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে জাপানের। কারণ ঢাকায় হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে নিহতদের মধ্যে সাত জন ছিলেন জাপানের নাগরিক। তারা সবাই মেট্রোরেল প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন। আবার রংপুরে জঙ্গি আক্রমণে নিহত হোশি কোনিও ছিলেন একজন জাপানি। অবশ্য সেসময়ই জাইকার বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবকদের জাপানে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে শহরাঞ্চলে নিয়ে আসা হয় জাপানি নাগরিকদের। জাইকার প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফরে আসতে চেয়েও শেষ মুহূর্তে সেই সফর বাতিল করেন। এক প্রকারের স্থবিরতা সৃষ্টি হয় জাইকার প্রকল্পগুলোতে। পরে জাপানিদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীকে অস্ত্রের অনুমতি দেওয়ার আবেদন জানায় জাপান। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এ অনুরোধ রাখা সম্ভব হয়নি। এর পরিবর্তে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত অস্ত্রধারী আনসার নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে সরকার। এরপরও নিরাপত্তা নিয়ে পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে না পারায় জাইকার প্রকল্পগুলোতে সীমিত পরিসরে কাজ করে আসছেন জাপানিরা। নিরাপত্তা জোরদার যেখানে : বিদেশিরা অবস্থান করেন এমন সব হোটেল-রেস্টুরেন্টে কঠোর নিরাপত্তা তল্লাশির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে বিমানবন্দরের মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রত্যেক হোটেল-রেস্টুরেন্টের প্রবেশপথে হবে আর্চওয়ে ও লাগেজ স্ক্যানার ও ডাবল গেট ব্যবহার করার তিন স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এসব ব্যবস্থা ছাড়া হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো চালু থাকতে পারবে না বলেও কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছে পুলিশ। এসব হোটেল-রেস্টুরেন্টে প্রত্যেককে নিরাপত্তা তল্লাশি শেষ করেই ঢুকতে হবে। এ ছাড়া গুলশান-বনানী ও বারিধারায় পুলিশের প্যাট্রোল ডিউটি বাড়ানো ও পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে পুলিশি ব্যবস্থার।

 

সর্বশেষ খবর