মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

জঙ্গিদের তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল সেই ছায়ানীড়

চট্টগ্রামে আরও দুই বাড়িতে অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

মগজ ধোলাইয়ের পর নব্য জেএমবিতে যোগদানকারীদের পাঠানো হতো সীতাকুণ্ডের প্রেমতলার চৌধুরীপাড়ার ‘ছায়ানীড়’ ভবনের জঙ্গি আস্তানায়। এখানেই তাদের দেওয়া হতো বোমা তৈরি, বোমা হামলা ও গ্রেফতার হওয়ার পর নানা কৌশলের প্রশিক্ষণ। এ জঙ্গি আস্তানাকে তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেই ব্যবহার করত নব্য জেএমবির সদস্যরা। ওই আস্তানা থেকে জব্দ করা বিভিন্ন নথিপত্রের ভিত্তিতে বিষয়টা একরকম নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপাশি এ আস্তানাটি বিস্ফোরক মজুদের গুদাম হিসেবেও ব্যবহার করা হতো বলে ধারণা করেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুর এ আলম মিনা বলেন, ‘ছায়ানীড় আস্তানায় চূড়ান্ত অভিযানের আগেই জঙ্গিরা বেশ কিছু সাংগঠনিক

কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলেছে। এর পরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। এ কাগজপত্রের জন্য বোমা বানানো ও হামলার কিছু তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণের কাগজপত্র রয়েছে। এসব কাগজপত্রের বিষয়ে গ্রেফতার দুই জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’

পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, ছায়ানীড়  ভবনের চূড়ান্ত অভিযানের আগে জঙ্গিরা সাংগঠনিক নথিপত্র আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। এর পরও কিছু কাগজপত্র জব্দ করা হয় ওই ভবন থেকে। ওই কাগজপত্রের মধ্যে একটি খাতা জব্দ করা হয়। ওই খাতায় লেখা রয়েছে ‘দাওয়াতুল ইসলাম’। ওই খাতায় দুই ধরনের বোমা তৈরির ফর্মুলা লেখা রয়েছে। এ বোমাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে নিক্ষেপযোগ্য বোমা এবং আরেকটি সুইচ দিয়ে বিস্ফোরণযোগ্য বোমা। ওই আস্তানা থেকে একটি সাংগঠনিক নির্দেশনাও জব্দ করা হয়। নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আক্রমণের শিকার হলে তাদের নিয়েই মরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, কোনোভাবেই পুলিশের হাতে ধরা দেওয়া যাবে না। আক্রমণের শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে সুইসাইডাল ভেস্ট গায়ে জড়িয়ে নিতে হবে। তারপর পুলিশের কাছাকাছি যেতে হবে। এরপর নিজের সঙ্গে পুলিশকেও উড়িয়ে দিতে হবে। তারা কাফের তাই তাদের হত্যা করতে হবে। এ ছাড়া বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম যেসব দোকান থেকে কেনা হয়েছে, সেগুলোর কয়েকটি তালিকা পাওয়া গেছে। তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপাশি বোমা মজুদ করার জন্যও জঙ্গিরা এ আস্তানা ব্যবহার করত বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। এ আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও তাজা বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। এখানে তৈরি করা বোমা দিয়েই চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় হামলার পরিকল্পনা ছিল বলে ধারণা করছে পুলিশ।

বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় অভিযান সমাপ্তি : সীতাকুণ্ডের প্রেমতলার ছায়ানীড় ভবনের জঙ্গিদের মুজদ করা বোমার নিষ্ক্রিয় অভিযান শেষ করেছে সিএমপির বোমা নিষ্ক্রিয় দল। গতকাল দুপুরে ওই ভবনে আর কোনো বোমা না থাকায় অভিযান শেষ করা হয়। সিএমপির বোমা নিষ্ক্রিয় দলের উপ-পরিদর্শক আফতাব উদ্দিন বলেন, ছায়ানীড় ভবন থেকে ৩৭টি বিভিন্ন ধরনের বোমা এবং বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক জব্দ করা হয়। ওই ভবনে আর কোনো বোমা না থাকায় নিষ্ক্রিয় অভিযান শেষ করা হয়েছে। আমাদের সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি মেজবাহ উদ্দিন মিঠু জানান, সোমবার ছায়ানীড় থেকে একটি গ্রেনেড ও নয়টি জেল প্যাকেট জব্দ করা হয়। পরে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়। প্রসঙ্গত, বুধবার দুপুরে সীতাকুণ্ডের লামার বাজার আমিরাবাদে সাধন কুটির থেকে নারীসহ দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যমতে একই এলাকার ছায়ানীড় ভবনে পুলিশ অভিযান চালায়। বুধবার বেলা ৩টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত চালানো ১৯ ঘণ্টার ‘অপারেশন অ্যাসল্ট সিক্সটিনে’ এক শিশু ও চার জঙ্গি নিহত হয়। জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করা হয় ২১ জনকে। অভিযানে দুই সোয়াত সদস্য আহত হন।

চট্টগ্রামে দুই বাড়িতে তল্লাশি, কোনো আলামত মেলেনি : চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানা এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে দুটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। নিয়মিত তল্লাশির অংশ হিসেবে ওই দুটি বাড়িতে গতকাল বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তল্লাশি চালানো হয়। অভিযান শেষে পুলিশ জানায়, কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। পুলিশ আরও জানায়, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে আকবর শাহ থানা এলাকায় কর্নেল হাট সিডিএ আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কের চারতলা ভবন ঘিরে অভিযান শুরু করে পুলিশ। এর তিন কিলোমিটার দূরে ঈশান মহাজন লেনের একটি চারতলা বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। সন্ধ্যা ৬টার দিকে অভিযান শেষ হয়। নগর পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) ফারুক-উল হক জানান, কিছু তথ্যের ভিত্তিতে নিয়মিত তল্লাশির অংশ হিসেবে ওই দুটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে কিছু পাওয়া যায়নি। অভিযানে নগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সোয়াত, র‍্যাব ও থানা পুলিশ অংশ নেয়। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দফতরের এলআইসি সেলের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই দুটি বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। তবে পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, সীতাকুণ্ডের নামারবাজার এলাকার ‘সাধন কুটির’ থেকে গ্রেফতার আরজিনা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, আকবর শাহ থানা এলাকায় তাদের আরও সঙ্গী অবস্থান করছে। এই তথ্যের ভিত্তিতেই পুলিশ অভিযানে নামে।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার দুপুরে সীতাকুণ্ডের আমিরাবাদের সাধন কুটির থেকে নারীসহ দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ছায়ানীড় ভবনে অভিযান চালায় পুলিশ। বুধবার বিকাল ৩টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত চালানো ১৯ ঘণ্টার ‘অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬’ অভিযানে এক শিশু এবং চার জঙ্গি নিহত হয়। সাধন কুটির থেকে গ্রেফতার হওয়া আরজিনার তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান চালায় পুলিশ।

 

সর্বশেষ খবর