বুধবার, ২২ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ২০০ কোটি টাকা ঋণ!

সাউথ বাংলায় হচ্ছেটা কী? তদন্তে নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী পাচ্ছেন ২০০ কোটি টাকার ঋণ। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণ দাতা ব্যাংকের এমডি স্বীকার করেছেন, আগে প্রকল্প ঋণ দেওয়ার পর নতুন করে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসাবে ঋণ দিচ্ছেন তারা। জানা গেছে, এই ঋণ অনুমোদনের পেছনে প্রভাব খাটাচ্ছেন ব্যাংকটির খোদ চেয়ারম্যান। ঘটনাটি ঘটেছে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডে। এই ব্যাংকের পরিচালনা  পর্ষদের চেয়ারম্যান হলেন এস এম আমজাদ হোসেন। আর ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মেসার্স আলফা এক্সেসরিজ অ্যান্ড এগ্রো এক্সপোর্ট। আমজাদ হোসেন নিজেই এই ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের মালিক বলে অভিযোগ আছে। আলোচিত এই ঋণ অনুমোদনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও অভিযোগ গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, তাদের কাছে ব্যাংকিং সম্পর্কিত অভিযোগ আসার পর সেটি তারা অধিকতর তদন্তের স্বার্থে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টে (এফআইসিএসডি) পাঠিয়ে দেন। জানা গেছে, মেসার্স আলফা এক্সেসরিজ নামে যে প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন করে ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, যৌথভাবে তার মালিক হচ্ছেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেনের নিজ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘লকপুর গ্রুপ’-এর কর্মকর্তা মো. আরজান আলী এবং আপন ভাই মো. রুহুল কুদ্দুসের ১৯ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কন্যা মাহফুজা খানম রিশা। সূত্র জানায়, অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রভাব খাটিয়ে নিজ মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানটিকে প্রথম দফায় ফান্ডেড ঋণ হিসেবে ৩৩ কোটি টাকা এবং নন-ফান্ডেড খাতে ১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার ঋণ মঞ্জুর করেন। এরপর ঋণ দাতা ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের কোনো অনুমোদন ছাড়াই ওই প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ‘মেয়াদি ঋণ’ খাতে ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং আমদানি ঋণপত্র খাতে আরও ২ কোটি ১৬ লাখ টাকার অতিরিক্ত ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়। নিয়মানুযায়ী এসব ঋণ অনুমোদনে কোনো ধরনের মার্জিন নেওয়া হয়নি। এমন কি প্রয়োজনীয় জামানতও ছিল না। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে প্রভাব খাটিয়ে চেয়ারম্যানের নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে এ ধরনের ঋণ অনুমোদনের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে ধরা পড়ে গত বছর। ওই বছরের ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক (খুলনা) কর্তৃক যে ‘বিশদ পরিদর্শন প্রতিবেদন’ দেওয়া হয় সেখানে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেনের ক্ষমতা ও অবস্থানগত প্রভাবের অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহার করে নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদন পর্যালোচনায় জানা যায়, নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ অনুমোদনের পরপরই ওই ঋণ গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পে ব্যবহার না করে বিতরণকৃত ঋণের অধিকাংশই ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজ মালিকানাধীন লকপুর গ্রুপের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করে ফেলেন। সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ঋণ স্থানান্তরের ওই অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ার পর ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানটিকে বিরূপ শ্রেণিভুক্ত করা হয়। এখন আবার ওই একই প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান নতুন করে ঋণ অনুমোদন দিচ্ছেন। সাউথবাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের ঋণ অনিয়ম সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের খুলনা শাখার তথ্য কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ জানান, বিষয়টি যেহেতু ব্যাংক সম্পর্কিত তাই এটি ‘গোপনীয়’। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লিখিত অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের এমডি ও সিইও মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, মেসার্স আলফা এক্সেসরিজ অ্যান্ড এগ্রো এক্সপোর্টকে দেওয়া ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবেদন দিয়েছিল, পরে তারাই আবার ওই ঋণের হিসাব ঠিক করে দিয়েছে। কীভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ঋণ হিসাব’ ঠিক করে দিল—এমন প্রশ্নের জবাবে এমডি বলেন, অনুমোদিত ঋণের বিপরীতে জামানত কম ছিল। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জামানত নিয়ে দিয়েছেন। ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানটির জমি এবং মেশিনারিজ জামানত হিসেবে গৃহীত হয়েছে। ফলে ঋণটি আর ঝুঁকিপূর্ণ নয়। ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানটির মালিক ওই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে এমডি জানান, পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান একসময় ওই প্রতিষ্ঠানটির মালিক ছিলেন। পরে তিনি তা বিক্রি করে দেন।

সর্বশেষ খবর