বুধবার, ২২ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

বেওয়ারিশ হিসেবে দুই জঙ্গির দাফন

ঢাকায় গ্রেফতার ৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

সীতাকুণ্ডের ছায়ানীড় জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন অ্যাসল্ট-১৬’-এ নিহত জঙ্গি দম্পতি কামাল উদ্দিন ও তার স্ত্রী জোবায়দা ইয়াসমিনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। এ সময় তাদের শিশু সন্তানকেও বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। সোমবার রাতে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের উদ্যোগে তাদের কোতোয়ালি চৈতন্যগলি কবরস্থানে দাফন করা হয়।

হানিফের লাশ দাফন : রাজধানীর আশকোনা থেকে র‌্যাব গ্রেফতারের পর মৃত হানিফ মৃধার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গ কর্তৃপক্ষ মৃতের ছোট ভাই হালিম মৃধার কাছে লাশ বুঝিয়ে দেয়। হানিফকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে বিচার দাবি করেন হালিম। স্বজনরা বলছেন, রাতেই গ্রামের বাড়ি বরগুনার আমতলীতে হানিফের লাশ দাফন করা হয়েছে।

রাজধানীতে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার ৫:  রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা থেকে জঙ্গি সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তারা হলেন— ওয়ালী জামান ওরফে অলি, আনোয়ারুল আলম ওরফে আনোয়ার, সালেহ আহম্মদ ওরফে শিষ, আবুল কাশেম ও মহসিন ওরফে মোহন। তাদের কাছ থেকে বিস্ফোরক, বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, জিহাদি বই, খেলনা পিস্তল, বন্দুক ও ৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। র‌্যাব বলছে, গ্রেফতারকৃতরা নব্য জেএমবির শীর্ষ দুই নেতা সারওয়ার-তামিম গ্রুপের সদস্য। এর মধ্যে দুজন প্রকৌশলী রয়েছেন। সন্দেহভাজন এই পাঁচজন র‌্যাবের কাছে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে র‌্যাব জানায়। এদিকে সোমবার রাতে গ্রেফতারকৃত পাঁচজনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে র‌্যাব। গতকাল তাদের ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১০-এর এএসপি রেজাউল করিম আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলামের আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়ে রিমান্ড শুনানির জন্য ২৮ মার্চ দিন ধার্য করেছেন।

এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বলেন, সরোয়ার-তামিমসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত ও গ্রেফতার হওয়ার পর দলগুলো নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে। তাই ঝিমিয়ে পড়া নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা করছে। গ্রেফতার পাঁচজনের একটি জঙ্গি সেল ছিল। এক বছরের বেশি সময় ধরে সেলের নিয়ন্ত্রক ছিল অলিউজ্জামান ওরফে অলি। গ্রেফতার পাঁচজন ছাড়াও এই সেলের আরও পাঁচ-ছয়জন সদস্য রয়েছে। এই জঙ্গি সেলটি সম্প্রতি সরকারি স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছে। নাশকতা পরিচালনার জন্য মনির এবং সালমান ওরফে আবদুল্লাহ নামে দুই জঙ্গিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মনির ও সালমানের পরিচয় ও তাদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।

র‌্যাব জানায়, সারোয়ার-তামিম গ্রুপের যে সব জঙ্গি আত্মগোপনে আছে তারা পুনরায় সংঘটিত ও একত্রিত হয়ে নাশকতার মাধ্যমে নিজ সংগঠনের মনোবল বৃদ্ধি ও সংগঠনকে চাঙ্গা করার পরিকল্পনা করছে। এ লক্ষ্যে তারা গৃহত্যাগ করে ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছদ্মবেশে বাড়ি ভাড়া করে বসবাস করছে।

র‌্যাবের বর্ণনায় গ্রেফতারকৃত পাঁচজনের মধ্যে অলি বহুজাতিক একটি কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বুয়েট থেকে ২০১২ সালে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। বুয়েটে পড়াকালে তার ধর্মীয় বিষয়ে আগ্রহের সৃষ্টি হয়। ২০১৫ সালে সারোয়ার-তামিম গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হলে তাকে কাফরুল এলাকার একটি জঙ্গি সেল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সেলের সদস্যদের ইন্টারনেট পরিচালনা ও টেলিগ্রাম আইডি ব্যবহারের ওপর দীক্ষা দিতেন অলি। তার নেতৃত্বে সদস্যরা ফেসবুকে ইসলাম অবমাননাকারী বিবিধ স্ট্যাটাস ভাইরাল আকারে পোস্ট করে সহানুভূতি ও সমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যে প্রচারণা চালায়। তার সহপাঠী আনোয়ারুল আলমও বুয়েট থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন। তিনি একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করতেন।

কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র হওয়ায় তিনি বোমা তৈরিতে পারদর্শী। আরবি জানা আবুল কাশেম ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংগৃহীত আরবিতে লেখা বিভিন্ন উগ্রবাদী মতাদর্শ বাংলায় ভাষান্তর করে নেটে ছড়িয়ে দিত। এ ছাড়া সদস্যদের থেকে মাসিক ইয়ানত সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্থানে বণ্টনও করত কাশেম। সালেহ আহাম্মেদ শীষও সংগঠনে নিয়মিত ইয়ানত প্রদান করত।

চট্টগ্রামে অস্ত্র চালনার ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে সালেহ। সে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি আসামি মুফতি হান্নানের আত্মীয় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে জানিয়েছে। সেলের আরেক সদস্য মহসিন। মাত্র তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে বিভিন্ন পরিবহনের হেলপার হিসেবে কাজ করত। আবুল কাশেম তাকে উগ্রবাদী ভিডিও প্রদর্শন ও জিহাদের প্রস্তুতি নিতে আয়াত পড়ে শুনাত এবং জাহান্নামের ভয় ও বেহেস্তের প্রলোভন বর্ণনার মাধ্যমে তাকে উগ্রবাদিতায় আকৃষ্ট করে। অল্প শিক্ষিত হওয়ায় মহসিন সহজেই উগ্রবাদে ঝুঁকে পড়ে। সেও গত বছর চট্টগ্রামে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর