বুধবার, ২২ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে জঙ্গি ঘাঁটি নেই আছে আশ্রয় কেন্দ্র

------------সিএমপি কমিশনার

রিয়াজ হায়দার, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে জঙ্গি ঘাঁটি নেই আছে আশ্রয় কেন্দ্র

চট্টগ্রামে কর্মরত ৪ হাজার বিদেশি এবং অতিগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো পুলিশের নিরাপত্তা বলয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন  চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. ইকবাল বাহার। সম্প্রতি চট্টগ্রামে জঙ্গি ঘাঁটিতে পুলিশি অভিযানে বিপুল গোলাবারুদ বিস্ফোরক উদ্ধার ও ৫ জনের মৃত্যুর পর জনমনে উদ্বেগের মাঝেও স্বস্থির বার্তা দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, জঙ্গি মোকাবিলায় চট্টগ্রামের পুলিশ আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্ষম। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সিএমপি কমিশনার বলেন, জঙ্গিরা কৌশল পাল্টে পারিবারিক ছদ্মবেশে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে পুলিশের জনবল আগের চেয়ে বেড়েছে, বেড়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণও। পুলিশি কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি হয়েছে। এজন্য আমরা যেকোনো সংকট মোকাবিলা করতে পারি। জঙ্গি মোকাবিলায় চট্টগ্রামের গুরুত্ব অনেকাংশে ঢাকার চেয়েও বেশি বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, জঙ্গি বিস্তার হচ্ছে ‘জিদের ভাত বিড়ালকে খাওয়ানোর মতোই। দেশের অগ্রগতি উন্নয়নের ক্রেডিট যাতে সরকার নিতে না পারে সেজন্য মহলবিশেষ জঙ্গিবাদকে উসকে দিচ্ছে। তারা দেশকে পেছনের দিকে টানতে চায়। সিএমপিতে কমিশনার হিসেবে যোগদানের আগে ইকবাল বাহার ছিলেন রাজশাহী পুলিশের ডিআইজি। এরও আগে ছিলেন পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (প্রশাসন) ও রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি। ঢাকা ও যশোর জেলার পুলিশ সুপারও ছিলেন তিনি। ১৯৮৯ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন এই কর্মকর্তা। সিএমপি কমিশনার বলেন, চট্টগ্রামে ঠিক ‘জঙ্গি ঘাঁটি নেই’, তবে জঙ্গিদের ‘আশ্রয়কেন্দ্র’ আছে। জঙ্গিদের হালনাগাদ তালিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঘোষণা দিয়ে তালিকা করছি না। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা প্রতিনিয়তই হালনাগাদ হচ্ছে। চট্টগ্রাম শহর থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়াদের মধ্যে অন্তত ১৬ জন এবং তাদের পরিবার সম্পর্কে গুরুত্ব দিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি থেকে এখনো অন্তত ৩৫৬ জন নিখোঁজ বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। জঙ্গি মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা সম্পর্কে ইকবাল বাহার বলেন, জঙ্গিরা যতই তৎপর হোক, মুহূতেই তারা যেকোনো জায়গায় একজোট হয়ে শক্তিশালী অভিযান চালানোর মতো শক্তি তাদের নেই। তবে জঙ্গি নির্মূল হয়নি, নিয়ন্ত্রণে আছে। সাম্প্রতিক অভিযানের সাফল্যগুলোও তাই প্রমাণ করে। সিএমপি কমিশনার বলেন, চট্টগ্রাম শহরে প্রায় ১৩ লাখ ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। কোনো ভাড়াটিয়ার গতিবিধি অস্বাভাবিক মনে হলেই পুলিশকে জানাতে বাড়িওয়ালাদের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে। জঙ্গিবিরোধী সচেতনতা তৈরিতে অন্তত ১০০টি উঠান বৈঠক করেছে সিএমপি। প্রত্যেককেই এখন ঈগলের চোখ নিয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে সিএমপি কমিশনার বলেন, বাংলাদেশে সাংগঠনিকভাবে আইএসের সদস্য নেই। তবে তাদের আদর্শের অনুসারী থাকতেই পারে। কিন্তু একটি মহল দেশকে পিছিয়ে নিতেই দেশে আইএসের অস্তিত্ব প্রমাণে মরিয়া। তারা দেশকে জঙ্গিরাষ্ট্র প্রমাণে উঠেপড়ে লেগেছে।

চট্টগ্রামে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিক ও অতিগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর (কেপিআই) নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ইকবাল বাহার বলেন, চট্টগ্রামের প্রায় ৪ হাজার বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক আমরা তাদের পাশে আছি—এমন আশ্বস্ত হওয়ার পরিবেশ রয়েছে। আমরা নিয়মিত তাদের কাছে যাচ্ছি, খোঁজখবর নিচ্ছি। কেপিআইগুলোতে রয়েছে সার্বক্ষণিক পুলিশি অবস্থান। তিনি বলেন, বিদেশিদের আমরা বোঝাতে চেষ্টা করছি, ‘ফিল সেফ, বি সেফ; নিরাপত্তাবোধ জাগ্রত করাটা এখন জরুরি। তাদের নিরাপত্তা বোধটুকু থাকলে কর্মক্ষেত্রেও আসা যাওয়ার পথে তাদের নিরাপত্তা  নিশ্চিতে তা সহায়তক হবে। নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই রয়েছে বিদেশি নাগরিকরা। চট্টগ্রামে জঙ্গিদের গুচ্ছ ঘাঁটি থাকা নিয়ে ইকবাল বাহার বলেন, জঙ্গি ঘাঁটি থাকার বিষয়টি স্বীকার বা অস্বীকারের বিষয় নয়। যতক্ষণ ঘাঁটি না পাচ্ছি, ততক্ষণ বলতে হবে ঘাঁটি নেই। তবে জঙ্গিদের অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত। এই অবস্থান অন্য কোথাও কিছু করার জন্যও হতে পারে।

সর্বশেষ খবর