শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

মুফতি হান্নানের ফাঁসি কবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুফতি হান্নানের ফাঁসি কবে

বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের গডফাদার হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ (হুজি-বি)-এর শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন মঙ্গলবার আপিল বিভাগ খারিজ করেছে। এর পর থেকেই সর্বমহলে প্রশ্ন, যার ছোবলে শক্তিশালী বোমায় বার বার কেঁপেছে দেশ, রক্তাক্ত হয়েছে মাজার থেকে শুরু করে রাজপথ, জনসভা, এমনকি সংস্কৃতি অঙ্গন, যার নিশানায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেই ভয়ঙ্কর জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসির রায় কার্যকর হবে কবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যার চেষ্টা ও হতাহতের ঘটনার মামলায় মুফতি হান্নান এবং তার দুই সহযোগীর ফাঁসির রায় কার্যকরে আইনি কোনো বাধা নেই। রাষ্ট্রপতির কাছে হান্নানের ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি নিষ্পত্তি হলেই আর কোনো সময় দেওয়া হবে না। গতকাল সন্ধ্যায় তিন আসামির মৃত্যু পরোয়ানা সিলেট কারাগারে পৌঁছেছে। সেখান থেকে মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুলের মৃত্যু পরোয়ানা গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে ফ্যাক্সযোগে পাঠানো হয়। কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন গতকাল বলেছেন, হুজি নেতা মুফতি হান্নান ও তার দুই সহযোগীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য সরকারের আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। আদেশ পেলেই ফাঁসি কার্যকর করতে তারা প্রস্তুত। গতকাল ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের যমুনা ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্বাহী আদেশ এখনো আমাদের হাতে পৌঁছায়নি। ফাঁসি কার্যকরে কারা কর্তৃপক্ষ সব সময়ই প্রস্তুত।’ জানা গেছে, তিন আসামির মধ্যে হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল রয়েছেন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। আরেক আসামি দেলোয়ার ওরফে রিপনকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। তারা মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলেও আপিল বিভাগে তা খারিজ হয়ে যায়। মঙ্গলবার সেই রায় প্রকাশের পর আসামিদের পড়ে শোনায় কারা কর্তৃপক্ষ। কাশিমপুর কারাগার কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে জানিয়েছে, মুফতি হান্নান ও বিপুল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন। আর রিপন সিলেট কারাগারের কর্মকর্তাদের বলেছেন, তার সিদ্ধান্ত তিনি পরে জানাবেন। প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে কারাবিধি অনুযায়ী এই আসামিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করবে কারা কর্তৃপক্ষ। তিন আসামির মধ্যে যিনি যেই কারাগারে আছেন, সেখানেই তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে বলে কারা কর্মকর্তাদের কথায় আভাস পাওয়া গেছে। সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার প্রাঙ্গণে ২০০৪ সালে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী গ্রেনেড হামলার মুখে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন নিহত হন। এ ছাড়া পুলিশ কনস্টেবল রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি মারা যান হাসপাতালে। আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অন্তত ৪০ জন ওই ঘটনায় আহত হন। আপিল বিভাগ গত বছর ৭ ডিসেম্বর এ মামলার আপিলের রায় ঘোষণা করে। গত বছর ১১ ফেব্রুয়ারি তিন আসামিকে হাই কোর্টের দেওয়া সর্বোচ্চ সাজার রায়ই তাতে বহাল থাকে। এ মামলার বাকি দুই আসামি মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে হাই কোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। আপিল না করায় তাদের ওই সাজাই বহাল থাকে। মৃত্যুদণ্ডের তিন আসামি আপিলের রায় পর্যালোচনার আবেদন করলেও ১৯ মার্চ সর্বোচ্চ আদালতে তা খারিজ হয়ে যায়। ফলে চূড়ান্ত বিচারেও ফাঁসির রায় বহাল থাকে। রিভিউ শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী তার মক্কেলদের দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার কথা জানিয়ে সাজা কমানোর আবেদন করেছিলেন। কিন্তু রায়ের সময় বিচারক বলেন, ‘তারা যে অপরাধ করেছেন তা পূর্বপরিকল্পিত একটি অপরাধ। ব্রিটিশ কূটনীতিবিদ ও তার সফরসঙ্গীদের হত্যা করার জন্যই এ হামলা চালানো হয়েছিল। এ অভিযোগের দায় থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া যায় না।’ বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাসহ হরকাতুল জিহাদের ১৩টি নাশকতামূলক ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার পেছনে মূল ব্যক্তি হলেন মুফতি হান্নান। রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায়ও তার মৃত্যুদণ্ডের রায় এসেছে বিচারিক আদালতে। ওই মামলায় তার আপিল হাই কোর্টে বিচারাধীন। এই হুজি নেতার বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। তিনি লেখাপড়া করেছেন গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায়। ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর ঢাকার বাড্ডা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০০০ সালের ২০ জুলাই সেই কোটালীপাড়াতেই শেখ হাসিনার সভামঞ্চের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। মুফতি হান্নান ওই মামলারও আসামি। প্রাণভিক্ষা ‘চাইবেন’ মুফতি হান্নান : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি মুফতি আবদুল হান্নান ও তার এক সহযোগী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। হরকাতুল জিহাদের শীর্ষনেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুলের রিভিউ আবেদন খারিজের রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি মঙ্গলবার মধ্যরাতে কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছায়। গতকাল সকাল ১০টার পর ওই রায় তাদের পড়ে শোনানো হয় বলে জানান কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দণ্ডপ্রাপ্তরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।’ সিলেটে ১৩ বছর আগে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা চালিয়ে পুলিশসহ তিনজনকে হত্যার দায়ে এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি দেলোয়ার ওরফে রিপন আছেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। সিলেটের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. সফিউল্লাহ বলেন, ‘রিপনকে রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা তা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে পরে জানাবেন।’ আদালতের সব বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাওয়ায় এই তিন জঙ্গির সামনে এখন কেবল ক্ষমাপ্রার্থনার সুযোগই বাকি।

সর্বশেষ খবর