বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্রিটিশ সংসদ এলাকায় সন্ত্রাসী হামলা

পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত ৪ আহত ২০, লন্ডনজুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক

প্রতিদিন ডেস্ক

ব্রিটিশ সংসদ এলাকায় সন্ত্রাসী হামলা

হতাহতদের নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স। একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে —এএফপি, বিবিসি

ব্রিটিশ সংসদ ভবন এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত চারজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় গতকাল বিকালে এ ঘটনায় লন্ডনজুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনী। হামলার সময় সংসদের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের অধিবেশন চলছিল, তাত্ক্ষণিকভাবে তা মুলতবি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে ওই ভবনেই ছিলেন। তাকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয় বলে তার মুখপাত্র জানিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে হামলাকারীও রয়েছে। খবর বিবিসি, সিএনএন ও রয়টার্সের। ব্রাসেলসে সন্ত্রাসী হামলার বছর পূর্তির দিনে লন্ডনের এ হামলাকে ‘সন্ত্রাসী ঘটনা’ বলছে যুক্তরাজ্য পুলিশ। প্রথম হামলার ঘটে পার্লামেন্ট ভবনের কাছে ওয়েস্টমিনস্টার সেতুতে গাড়ি চাপা দিয়ে অনেককে হতাহত করার মধ্য দিয়ে। এরপর ওয়েস্টমিনস্টার প্যালেস প্রাঙ্গণে ছুরি নিয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তার ওপর চড়াও হয় আরেক সন্ত্রাসী। উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার পর ওই হামলাকারী ভিতরের দিকে দৌড়ালে তাকে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি করে। এতে তিনি নিহত হন।  সংবাদ সূত্রগুলো বলছে, দুটি ঘটনার যোগসূত্র পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। ওই ব্যক্তি গাড়ি থেকে নেমেই পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছিলেন কিনা জানা যায়নি। তবে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। অন্য কিছু না জানা পর্যন্ত আমরা এটাকে সন্ত্রাসী ঘটনা হিসেবেই দেখছি। রয়টার্সের শিরোনামে ঘটনাটিকে বলা হয়েছে ‘সন্ত্রাসী ঘটনা’। বিবিসি বলছে, ‘হামলা’। স্কাই নিউজ লিখেছে ‘গাড়ি হামলা, গুলি, ছুরিকাঘাত’। তবে পুরো ঘটনা স্পষ্ট করতে পারেনি কেউই। হামলাকারী একাধিক বলে খবর ছড়ালেও লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার মার্ক রোলে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘হামলাকারী একজনই ছিল। সম্ভবত সে মারা গেছে।’ এ ঘটনায় মোট চারজন নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। সূত্র বলছে, বিকালে পার্লামেন্টে অধিবেশন চলার সময় হঠাৎ বিকট একটি শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর পরক্ষণেই কয়েকটি গুলির শব্দ পাওয়ার কথা পার্লামেন্ট সদস্য ও কর্তব্যরত সাংবাদিকরা টুইটারে জানালে সঙ্গে সঙ্গে তা গণমাধ্যমের শিরোনামে চলে আসে। ধারণা করা হচ্ছে, বিকট শব্দটি হতে পারে সেতুর কাছে রেলিংয়ে গাড়িটির ধাক্কা। আর এর পরপরই ছুরি হাতে চড়াও ব্যক্তিকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের করা গুলির শব্দ শুনতে পান সবাই। এ ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একজন নারীর কথা জানিয়েছে স্কাই নিউজ, যিনি গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন। একজন পুলিশের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে বিবিসি, যার মৃত্যু ঘটে ছুরিকাঘাতে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে স্কাই নিউজ জানিয়েছে, ছুরি হাতে একজন পুলিশের ওপর চড়াও হলে তাকে গুলি করা হয়। ছুরি হাতে এক ব্যক্তিকে প্রাসাদ প্রাঙ্গণে দৌড়াতে দেখা যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানিয়েছে বিবিসিও। তার পেছনে তখন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ছুটছিলেন।  হাউস অব কমন্সের নেতা ডেভিড লিডিংটনকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানায়, পুলিশের ওপর হামলাকারী ওই ব্যক্তিকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গুলি করেছে। রয়টার্সের এক সাংবাদিক বলেন, হঠাৎ বিকট শব্দের পর তিনি পার্লামেন্ট ভবন প্রাঙ্গণে দুজনকে পড়ে থাকতে দেখেন। ধারণা করা হচ্ছে, ছুরিকাঘাতের পর পুলিশ সদস্য এবং গুলিবিদ্ধ হামলাকারীকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। নিহত ব্যক্তি কে, তিনি কী কারণে চড়াও হয়েছিলেন পুলিশের ওপর, সে বিষয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে কিছু জানা যায়নি। ডেইলি মেইলের সাংবাদিক কোয়েন্টিন লেটস বলেন, হামলাকারী খোলা গেট দিয়ে ঢুকে পড়েন, তারপর পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছিলেন। একজন পুলিশ সদস্য মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তারপর হামলাকারী দৌড়াতে থাকে এমপিরা যে গেট দিয়ে পার্লামেন্টে ঢোকেন সেদিকে। ২০ গজের মতো দৌড়ানোর পর তাকে সাদা পোশাকে থাকা দুই নিরাপত্তার গুলিতে তিনি পড়ে যান। রয়টার্সের এক আলোকচিত্রী বলেছেন, এ ঘটনায় ডজনখানেক ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় দেখেছেন তিনি। তার তোলা ছবিতে কয়েকজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। এর মধ্যে এক নারী গাড়ির নিচে চাপা পড়েন।  আহতদের মধ্যে ফ্রান্সের কয়েকটি স্কুল শিশুও রয়েছে। আহতদের যে ছবি গণমাধ্যমে এসেছে, তাদের রক্তাক্ত অবস্থায় সড়কে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। যা দেখে মনে হচ্ছে, তারা গাড়িটির ধাক্কায় জখম হন। স্কাই নিউজের সাংবাদিক অ্যালান প্যারি বলেন, সেতুর রেলিংয়ে একটি গাড়ি আঘাত হানে, সেখানে একজন পথচারী অথবা সাইকেল আরোহীকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। পার্লামেন্ট ভবনে অবস্থানরত রয়টার্সের এক সাংবাদিক বলেন, ফটকের ভিতরে আহত দুজনকে চিকিৎসা দিতে দেখেছেন তিনি।

হামলার পর ওই এলাকায় সড়ক বন্ধ করে দেয় পুলিশ। সরিয়ে নেওয়া হয় অন্যদের। লন্ডনের ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জানানো হয়েছে বলে তার মুখপাত্র জানিয়েছেন। তবে এ নিয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে ট্রাম্পের কোনো বক্তব্য আসেনি।

রয়টার্স ও সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ঘটনার পরপরই সংসদ এলাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে পার্লামেন্ট সদস্যদের ওই সময় সংসদের বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়।

সর্বশেষ খবর