শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

আতঙ্কে লন্ডন, চলছে বাড়িতে বাড়িতে অভিযান

দায় স্বীকার আইএসের

প্রতিদিন ডেস্ক

আতঙ্কে লন্ডন, চলছে বাড়িতে বাড়িতে অভিযান

ব্রিটেনের ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজে গত বুধবার হামলার ঘটনার পর সেন্ট্রাল ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে শহরের ছয়টি বাড়িতে রাতভর অভিযান চালিয়ে অন্তত আটজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মেট্রোপলিটন পুলিশের সন্ত্রাস দমন বিভাগের শীর্ষ এক কর্মকর্তা মার্ক রাউলি বলেছেন, সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হামলাকারীর পরিচয় পাওয়া গেছে তার নাম খালিদ মাসুদ। তিনি আরও জানান, ওই ঘটনার পর কয়েকশ গোয়েন্দা পুলিশ রাতভর এই অভিযান চালিয়েছে। লন্ডনের পুলিশ বলছে, হামলাকারী আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের দ্বারা উৎসাহিত হয়ে হামলা চালিয়েছে বলে তারা মনে করছেন। এদিকে রক্তক্ষয়ী ওই সন্ত্রাসী হামলার পর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তারা এ ঘটনার দায়ও স্বীকার করেছে।

স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের বাইরে এক বিবৃতিতে রাউলি বলেন, ‘তদন্ত থেকে আমাদের এখনো এটিই মনে হচ্ছে যে, হামলাকারী একাই হামলা চালিয়েছে এবং সে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ থেকেই এ কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে এ ধরনের আর কোনো হামলার হুমকির সুনির্দিষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই।’ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে হাউস অব কমন্সে বলেছেন, হামলাকারী একজন ব্রিটিশ এবং নিরাপত্তা সংস্থা এমআইফাইভ কয়েক বছর আগে তার বিরুদ্ধে তদন্তও চালিয়েছিল। তবে সে সাম্প্রতিক গোয়েন্দা তদন্তের আওতায় ছিল না। তিনি বলেন, হামলাকারী একাই হামলা চালিয়েছে এবং সে ইসলামিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তার হামলার পরিকল্পনা কিংবা উদ্দেশ্য সম্পর্কে আগাম কোনো গোয়েন্দা তথ্য ছিল না। তবে পুলিশ হামলাকারীর পরিচয় জানে এবং সঠিক সময়ে তা প্রকাশ করা হবে। এ হামলার পর এখন আর সে ধরনের হামলার হুমকির কোনো কারণ নেই বলেও আশ্বস্ত করেছেন মে। তিনি আরও বলেছেন, সন্ত্রাসের কাছে ব্রিটেন হার মানবে না কখনো।

নিহত হয়েছেন যারা : নিহত পুলিশ অফিসারের নাম কিথ পামার। বয়স ৪৮। তিনি ছিলেন পুলিশের পার্লামেন্টারি এবং ডিপ্লোমেটিক প্রটেকশন কমান্ডের সদস্য। তিনি ১৫ বছর ধরে পুলিশের চাকরিতে ছিলেন। নিহত একজন পথচারীর নাম আয়শা ফ্রেড। তিনি ডিএলডি কলেজ লন্ডনে কাজ করতেন। হামলাকারী ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজ দিয়ে যখন গাড়ি তুলে দিয়েছিল লোকজনের ওপর তখন তিনি আহত হন। নিহত আরেকজনের বয়স ৫০। তিনি একজন পুরুষ।

আহতদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের মানুষ : ওয়েস্টমিনস্টার সেতুতে পথচারীদের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে প্রায় ৪০ জনকে আহত করা হয়। আহতদের ৭ জনের অবস্থা গুরুতর। বাকি আরও ২৯ জনকে এখনো হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আহতরা বিভিন্ন দেশের মানুষ বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মে। তাদের ১২ জন ব্রিটিশ, তিনজন ফরাসি শিশু, দুজন রুমানিয়ান, চারজন দক্ষিণ কোরীয়, দুজন গ্রিক, একজন জার্মানি, একজন পোল্যান্ডের, একজন আয়ারল্যান্ডের, একজন চীনের, একজন ইতালির এবং একজন যুক্তরাষ্ট্রের। তিন পুলিশ কর্মকর্তাও ঘটনায় আহত হয়েছেন। তাদের দুজনের অবস্থা গুরুতর।

যেভাবে হামলা  : বিগ বেনের কাঁটায় তখন দুপুর দুটো ৪০। টেমস নদীর দুই পাড়ে পর্যটকদের ভিড়। পুরোদমে চলছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অধিবেশন। হঠাৎই ওয়েস্টমিনস্টার সেতুর ওপর দিয়ে একটা কালো গাড়ি ছুটে এসে পিষে দেয় বেশ কিছু মানুষকে। ধাক্কায় টেমস নদীতেই ছিটকে পড়েন এক নারী। তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সময় আরেকজন পথচারী ওই জঙ্গির গাড়িচাপায় মারা গেছেন। তারপর পার্লামেন্ট ভবনের রেলিংয়ে ধাক্কা মেরে থেমে যায় গাড়িটি। লম্বা ছুরি হাতে গাড়ি থেকে নামে চালক। পার্লামেন্ট চত্বরে ঢুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের ওপর। পুলিশের পাল্টা গুলিতে তখনই নিহত হয় সে। মুহূর্তে পার্লামেন্ট চত্বর, ওয়েস্টমিনস্টার সেতুসহ গোটা এলাকার দখলে নিয়ে নেয় নিরাপত্তা বাহিনী। স্থগিত রাখা হয় নিম্ন কক্ষ হাউস অব কমন্সের অধিবেশন। প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে তখন পার্লামেন্টেই ছিলেন। একটি গাড়িতে করে তাকে কোনো অজ্ঞাত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যান দেহরক্ষীরা। ঘটনার সময় পার্লামেন্টে প্রায় ২০০ জন এমপি ছিলেন। পার্লামেন্ট লক ডাউন করে তাদের পার্লামেন্ট ভবনের মধ্যেই থাকতে বলা হয়।

আহত পুলিশকে বাঁচাতে ‘বীর’ মন্ত্রীর প্রচেষ্টা : লন্ডনে পার্লামেন্টের সামনে জঙ্গির ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা পিসি কেইথ পালমার। তবে ওই মুহূর্তে তাকে বাঁচাতে ছুটে এসেছিলেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের একজন মন্ত্রী এবং কনজারভেটিভ পার্টির এমপি টোবিয়াস এলউড। তার এই ভূমিকার কারণে ‘বীর’ হিসেবে তাকে অভিহিত করছেন অনেকেই। এলউড একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা। ছুরিকাঘাতে আহত পুলিশ পালমারকে মুমূর্ষু অবস্থায় মুখে মুখ লাগিয়ে বাতাস দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।

আইএসের উচ্ছ্বাস : যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের বাইরে রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাসী হামলা উদ?যাপন করছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। জঙ্গিদের ইন্টারনেটভিত্তিক তত্পরতা নজরদারিতে যুক্ত ওয়েবসাইট সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের প্রধান রিটা কাত্জ তার টুইটারে লিখেছেন, আইএসের সমর্থকরা অনলাইনে এই হামলার ব্যাপারে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে। তারা এই হামলাকে রক্তের বদলে রক্ত বলে অভিহিত করেছে। তারা বলছে, এ ঘটনা ইরাকের মসুলে যুক্তরাজ্যের বিমান হামলার প্রতিশোধ। বিবিসি, এএফপি।

সর্বশেষ খবর