শিরোনাম
শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
আগুনঝরা মার্চ

বঙ্গবন্ধুর বার্তা নিয়ে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে গিয়েছিলাম

খালেদ মোহাম্মদ আলী

বঙ্গবন্ধুর বার্তা নিয়ে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে গিয়েছিলাম

মার্চ ’৭১-এ সারা দেশে যখন নন কো-অপারেশন চলছিল তখন একদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ধানমন্ডির বাসায় পড়ার রুমে আমাকে একান্তে ডেকে অনেক কথা বললেন। মূলত জয়দেবপুরের দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টে একটা জরুরি মেসেজ (বার্তা) পৌঁছে দিতে নির্দেশ দিলেন। এ ছাড়াও সেখানে বাঙালি সেনাবাহিনী সদস্যদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তা দেখে আসতে হবে। সত্যকথা বলতে কী দ্বিতীয় বেঙ্গলের কারও সঙ্গে আমার তেমন যোগাযোগ ও পরিচয় ছিল না। সে সময়ে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার জাকির খান চৌধুরী (পরবর্তীতে জাতীয় পার্টির মন্ত্রী হয়েছিলেন) ওরফে হারুন ভাইয়ের কাছে যাই। তার মতিঝিল অফিসে গিয়ে বিস্তারিত খুলে বলি। তিনি আমাকে জানালেন তার বন্ধুর ছোটভাই সেখানে চাকরি করেন। সে সময় আমরা কীভাবে যাব—সেখানে গিয়ে কী বলব এসব নির্ধারণ করি। পরেরদিন আমরা ঢাকা-গ ১০৪ নম্বর গাড়ি নিয়ে জয়দেবপুরে যাই। আমার সঙ্গে আরও ছিলেন আমার বন্ধু মোহায়মেন ও যাওয়ার পথে এসএম হল থেকে ছাত্রনেতা মাহমুদুর রহমান বেলায়েতকে সঙ্গে নিয়ে যাই। পরবর্তীতে বেলায়েত দুবার এমপি হয়েছিলেন। সে সময় আমি এমএনএ হলেও পরিচয় গোপন রাখি। জয়দেবপুর গিয়ে আমরা আগে ব্যাংকে যাই। পরবর্তীতে সেকেন্ড বেঙ্গলে পৌঁছে নিজেদের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয় দেই। পরবর্তীতে হেডকোয়ার্টার্সে গিয়ে দেখি তৎকালীন ক্যাপ্টেন আজিজ কার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলছেন। তাদের মধ্যে অস্ত্র নিয়ে বিশেষ করে এমজি-মেশিনগান নিয়ে কথা হচ্ছিল। হারুন ভাই তাকে ইশারা করলেন কথা বন্ধ করতে। তখন আজিজ কথা বন্ধ করে আমাদের নিয়ে অফিসার্স ক্লাবে চলে আসেন। বন্ধু মোহায়মেন ও বেলায়েতের বুকে একটি ব্যাজ ছিল। যাতে লেখা ছিল ‘একটি বাংলা অক্ষর, একটি বাঙালির জীবন’। একটা ব্যাজ নিয়ে আজিজ সাহেব নিজে বুকে পরলেন। এ সময় তৎকালীন মেজর এ কে এম শফিউল্লাহ সাহেব রুমে ঢুকলেন। তিনি ঢুকেই আজিজ সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলেন ‘কী এটা? এটা ওনাকে ফেরত দাও’। তিনি বললেন, আমরা কী তা ব্যাজ পরে দেখাতে হবে না। আমাদের পরিচয় জানতে চাইলেন তিনি। আজিজ সাহেব আমাদের ব্যাংকের লোক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এরপর তিনি চলে গেলেন। আমরা ক্যাপ্টেন আজিজকে বললাম এমজি সারেন্ডার করা যাবে না। পাকিস্তান বলতে পারে পুরাতনগুলো ফেরত দাও, নতুন নাও। এ সময় যাইহোক আমাদের আপ্যায়ন করলেন তিনি। আমরা তাকে জানালাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের পাঠিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে কোনো সময় যে কোনো মেসেজ দিতে পারি। সেসব মেসেজ আপনারা ফলো করবেন।’ সে জন্যই আপনাদের কাছে আসা। কথাগুলো একমাত্র আপনাকে জানিয়ে গেলাম। এর মধ্যে তৎকালীন মেজর মঈন আহমেদ চৌধুরী সেখানে ঢুকলেন। আমরা তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আলাপ করলাম। তবে কেন এসেছি তার কারণ বলিনি। আলাপকালে আমরা জানতে পেরেছি—বেঙ্গলের সদস্যদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তারা কয়েক মাসের বেতন ভাতা নিয়েছেন। এ ছাড়াও স্থানীয় লোকজন তাদের তরিতরকারি দিয়ে সাহায্য করতে ইচ্ছুক। তখন মনে হয়েছে আমার মাধ্যমে খবর পাঠানোর আগেই বঙ্গবন্ধু হয়তো স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বেঙ্গল সদস্যদের সহায়তা করতে বলেছেন। যাইহোক আমরা জয়দেবপুর থেকে ফিরে বঙ্গবন্ধুর কাছে রিপোর্ট করি। পরবর্তীতে অনেক ঘটনা ঘটেছে। যুদ্ধের সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। আমাকে দিয়ে তৎকালীন কর্নেল মোহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানীকে নিয়ে আসতেন ৩২ নম্বর বাড়িতে। মার্চ মাসে একাধিকবার অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে ওসমানীর সঙ্গে বৈঠক করেন বঙ্গবন্ধু। আমি তাকে নিয়ে আসতাম ঠিকই। কিন্তু কী কথা হয়েছে তাদের মধ্যে তা আজও জানতে পারিনি। আজকে অনেকেই অনেক কথা বলেন—কেউ কেউ বলেন, বঙ্গবন্ধু নাকি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এটা তাদের অজ্ঞতা, মিথ্যাচার ও মনগড়া কথাবার্তা।

লেখক : ৬৯ গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জাতীয় পরিষদ ও গণপরিষদ সদস্য।

অনুলিখন : রফিকুল ইসলাম রনি

সর্বশেষ খবর