শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

জঙ্গি আস্তানায় শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান

সিলেটে আতিয়া মহলে নারী-পুরুষ জঙ্গি, গ্রেনেড নিক্ষেপ । ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী কমান্ডো, সোয়াত

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

জঙ্গি আস্তানায় শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী পাঠানপাড়ার আতিয়া মহলের কাছে পুলিশের অবস্থান, পরে সেখানে পৌঁছে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো সদস্যরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী পাঠানপাড়া। একই মালিকের পাশাপাশি দুটি ভবন। একটি চার তলা, অন্যটি পাঁচ তলা। পাঁচ তলা ভবনটির নিচতলায় প্রায় তিন মাসে আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পরিচয়ে ভাড়া নেন এক যুবক। নিজেকে পরিচয় দেন কাওছার হিসেবে, আর স্ত্রীর নাম বলেন মর্জিনা। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও কেউ জানতেন না তাদের জঙ্গি পরিচয়। তবে কয়েক দিন আগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ধরা পড়া দুই জঙ্গির কাছ থেকে সিলেটের এই জঙ্গি ঘাঁটির সন্ধান পায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। দ্রুত বিষয়টি অবহিত করা হয় সিলেটের পুলিশকে। বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতেই তারা ঘিরে ফেলে ভবনটি। এরপর শুরু হয় রুদ্ধশ্বাস অভিযান। সারা দিন ভবনটি পুলিশ ঘিরে রাখার পর বিকাল ৪টায় এসে অভিযানে যোগ দেয় সোয়াত। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র এবং সরেজমিনে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী পাঠানপাড়ার ‘আতিয়া মহল’-এ জঙ্গি আস্তানা রয়েছে, এমনটা নিশ্চিত হওয়ার পর ভবনটি ঘিরে ফেলে পুলিশ। পুলিশ নিশ্চিত হয় নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে অবস্থান করছেন জঙ্গি দম্পতি। রাতেই তারা তালা ঝুলিয়ে দেয় ওই ফ্ল্যাটের প্রধান ফটকে। সকাল ৭টার দিকে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গিরা ভবনের ভিতর থেকে দুটি বিস্ফোরণ ঘটায়। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এম রোকন উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘এগুলো শক্তিশালী গ্রেনেড ছিল বলে আমরা ধারণা করছি।’ সাবেক সরকারি কর্মকর্তা উস্তার আলীর মালিকানাধীন ‘আতিয়া মহলে’ পাশাপাশি চার তলা ও পাঁচ তলা দুটি ভবন রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গতকাল সকালেই চার তলা ভবনের ১২টি ফ্ল্যাটের সব বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়। তাদের  রাখা হয় জহির-তাহির মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয় ভবনে। তবে পাঁচ তলা ভবনের নিচতলায় জঙ্গিদের অবস্থান হওয়ায় সেই ভবনের বাকি ২৯টি ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সরিয়ে আনার ঝুঁকি নেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দুপুর ১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত হ্যান্ডমাইকে ক্রমাগতভাবে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। তবে সাড়া দেয়নি জঙ্গিরা। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এম রোকন উদ্দিন বলেন, ‘আমরা বার বার জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু তারা আত্মসমর্পণ করেনি।’ আত্মসমর্পণ না করলেও বাড়ির ভিতরে জানালা দিয়ে জঙ্গিরা দ্রুত সোয়াত ফোর্স পাঠাতে বলে। দুপুর সোয়া ১টার দিকে নারী কণ্ঠে উচ্চৈঃস্বরে বলা হয়, ‘আপনারা (পুলিশ) শয়তানের পথে, আমরা আল্লাহর পথে।’ পরে পৌনে ২টার দিকে পুরুষ কণ্ঠে বলা হয়, ‘দেরি কেন, দ্রুত সোয়াত পাঠাও। আমাদের সময় কম।’ এরপর জঙ্গিদের আর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বিকাল ৪টার সামান্য আগে ঢাকা থেকে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান বিশেষায়িত সোয়াত টিমের সদস্যরা। এর কিছুক্ষণ পর আসে বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। সোয়াত টিম ঘটনাস্থলে এসে ভবনের চারদিক পর্যবেক্ষণ করে। সিলেটের পুলিশ ও বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলে অভিযানের পরিকল্পনা করে সোয়াত। গতকাল রাত সোয়া ৮টায় পাশের চার তলা ভবনে অবস্থান নেন সোয়াতের সদস্যরা। রাতে সেনাবাহিনীর একটি প্যারা কমান্ডো টিম ঘটনাস্থল আসে। পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘পরিস্থিতি অনুকূলে। ভবনের ভিতর কিছু বিস্ফোরক রয়েছে বলে ধারণা করছি।’ গত রাত ২টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে তৈরি ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য।

যে পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেয় জঙ্গিরা : গত জানুয়ারির শুরুর দিকে প্রায় ৩০ বছর বয়সী কাওছার নিজেকে একটি বাণিজ্যিক কোম্পানির কর্মকর্তা পরিচয়ে ওই বাসা ভাড়া নেন। সঙ্গে ছিলেন মর্জিনা। আতিয়া মহলের মালিক উস্তার আলী বলেন, ‘তারা নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দেন। এত দিন তাদের কর্মকাণ্ডে সন্দেহজনক কিছু দেখা যায়নি। তবে পুলিশের কাছ থেকে তাদের জঙ্গি পরিচয় জানার পর সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি।’

দফায় দফায় গুলির শব্দ : সিলেটের জঙ্গি ঘাঁটি ঘিরে গতকাল সকাল থেকে পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি, এসবি, পিবিআইসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নেয়। রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দফায় দফায় শোনা যায় গুলির শব্দ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গিদের ব্যতিব্যস্ত ও আতঙ্কে রাখতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর