শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

একাধিক পদ না ছাড়লে ব্যবস্থা

মাহমুদ আজহার

একাধিক পদ না ছাড়লে ব্যবস্থা

এক নেতার এক পদের বিধান এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি বিএনপি। এখনো ১৮ জন কেন্দ্রীয় নেতা একাধিক পদে বহাল রয়েছেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশনায় তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে একাধিক পদের একটি রেখে বাকিগুলো ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের মহাসচিব প্রথম দফায় একাধিক পদ ছাড়তে সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছে চিঠি পাঠান। সর্বশেষ মঙ্গলবার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী দ্বিতীয় দফায় চিঠি পাঠান বলে দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও জেলা বা মহানগর কমিটির ৬১ নেতা একাধিক পদধারী ছিলেন। একাধিক পদ ছাড়তে গত বছরের ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত মৌখিকভাবে তাদের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘মহাসচিব’ পদ রেখে একাধিক পদ ছেড়ে দেন। একইভাবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানসহ ৪২ নেতা এক পদ রেখে বাকি পদ ছেড়ে দেন। নেতাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় দায়িত্ব ছাড়েন ২২ জন। বাকিরা জেলা ও উপজেলার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। কিন্তু ১৮ জন নেতা এ ব্যাপারে কেন্দ্রকে কোনো মতামত জানাননি।

এ প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘একাধিক পদে কয়েকজন নেতা রয়েছেন। তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে কেউ স্বেচ্ছায় একাধিক পদ না ছাড়লে তাদের এক পদ নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই অবশিষ্ট কয়েকজন এক পদ রেখে বাকি পদ ছেড়ে দেবেন।’ সূত্র জানায়, একাধিক পদে থাকা নেতারা হলেন— বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও পটুয়াখালী জেলা সভাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী (অব.), চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ফরিদপুর জেলা সভাপতি শাহজাদা মিয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও লক্ষ্মীপুর জেলা সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নাসিরনগর উপজেলা সভাপতি কাজী আকরামুজ্জামান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঘাটাইল উপজেলা সভাপতি লুত্ফর রহমান আজাদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও হালুয়াঘাট উপজেলা সভাপতি আফজাল এইচ খান, যুগ্ম-মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার, যুগ্ম-মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা সভাপতি খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নাটোর জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-কর্মসংস্থান সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া, সমবায় সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক জি কে গউছ, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক ও কলাপাড়া উপজেলা সভাপতি এ বি এম মোশাররফ হোসেন, পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ও নাগরপুর উপজেলা সভাপতি গৌতম চক্রবর্তী, শিশুবিষয়ক সম্পাদক ও মির্জাপুর উপজেলা সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, সহ-জলবায়ুবিষয়ক সম্পাদক ও মেলান্দাহ উপজেলা সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, উপ-কোষাধ্যক্ষ ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ১ নম্বর যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান বাবু। বিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, দ্রুতই নির্বাহী কমিটির শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়া হবে। যারা দলের একাধিক পদে রয়েছেন তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত জানার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে যারা বিভিন্ন জেলা বা মহানগর কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে তাদের স্থলে নতুনদের দায়িত্ব দেওয়া হবে।

জানা যায়, সম্প্রতি বিষয়টি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অবহিত করলে সংশ্লিষ্টদের এক পদ রেখে বাকি পদ থেকে পদত্যাগ করতে চিঠি দিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের চিঠি দেন তিনি। খালেদা জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বিতীয় দফায় এই চিঠি সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছে পাঠানো হয়। ৫ এপ্রিলের মধ্যে কেউ স্বেচ্ছায় পদ না ছাড়লে দলের হাইকমান্ড সংশ্লিষ্টদের একটি পদ নির্ধারণ করে দেবেন।

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘চিঠি পাঠিয়েছে শুনেছি। আমি বিষয়টি নিয়ে ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলব। কারণ বরিশাল মহানগরের অবস্থা খুবই খারাপ। তখন তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তাই মেনে নেব।’

সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘কেন্দ্রের চিঠি পেয়েছি। আমি তো জেলার পদ ছেড়ে দিতে চাই, কিন্তু কার কাছে নেতৃত্ব দিয়ে আসব ভরসা পাচ্ছি না। দলের দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের যেভাবে একটি প্লাটফরম করে ঐক্যবদ্ধ রেখেছিলাম, তা আমার অনুপস্থিতিতে ধরে রাখা কঠিন হয়ে যেতে পারে। তার পরও দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। দল যা ভালো মনে করে, তাই হবে।’

কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্রে এক নেতার এক পদ কার্যকর করা হচ্ছে। দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আমিও শ্রদ্ধাশীল। তাই কেন্দ্রের সহ-সাংগঠনিক পদ থেকে পদত্যাগ করে জেলায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর