শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্বীকৃতি আদায়ে কূটনৈতিক লড়াইয়ে বাংলাদেশ

জুলকার নাইন

একাত্তরের সেই ভয়াল ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে দীর্ঘ কূটনৈতিক লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ লড়াইয়ের কর্মকৌশল তৈরির জন্য প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। বৈশ্বিক এ স্বীকৃতির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে ইতিমধ্যে নিউইয়র্ক ও জেনেভায় জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থার দুই সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে সিনিয়র দুই কূটনীতিককে। তাদের কাছ থেকে তথ্য এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুসারে নেওয়া হবে পরবর্তী পদক্ষেপ। প্রয়োজনে করা হতে পারে বিশেষ কমিটিও। তবে এ ধরনের বৈশ্বিক স্বীকৃতি আদায়ের প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচিত পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির আগে বড় সংখ্যক সমর্থক দেশের স্বীকৃতি প্রয়োজন হবে। সমর্থক দেশগুলোকে প্রস্তাবটি নিজ নিজ দেশের পার্লামেন্টে পাস করাতে হবে। তবে সবার আগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যার চিত্র ব্যাপক পরিসরে তুলে ধরতে হবে বিশ্ববাসীর সামনে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ইতিমধ্যে জাতিসংঘ ২০১৫ সালে গণহত্যা সনদ গ্রহণ করেছে। সেখানে ৯ ডিসেম্বরকে গণহত্যা দিবস হিসেবে না বলে গণহত্যার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে একটি দিবস ঘোষণা করেছে। কাজেই এটি আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হবে না। তাই ২৫ মার্চের কালরাতটিতে যে গণহত্যা হয়েছিল, সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে আমরা মনোযোগ দিয়েছি।’ সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এটি অসম্ভব কোনো কাজ নয়। প্রতিটি রাষ্ট্রকে আমাদের আলাদাভাবে অনুরোধ করে রাজি করাতে হবে এবং স্বীকৃতি আদায় করতে হবে। সে বিচারে এটি সময়সাপেক্ষ, কঠিন, নতুন, গতানুগতিক কূটনীতির বাইরের একটি কাজ। প্রয়োজন হবে সৃজনশীল কূটনীতির। এটি ইতিহাসকে আবার সবার সামনে তুলে ধরার কাজ। আমি যখন বাইরের কারও কাছে এ নিয়ে অনুরোধ করব তখন এ ব্যাপারে আমাদের পুরোপুরি প্রস্তুতি থাকতে হবে। যত  বেশি সম্ভব রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়ে আমরা চেষ্টা করব। অবশ্য ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টায় বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে পারে। কারণ একাত্তর সালে সব রাষ্ট্রের অবস্থান এখনকার মতো ছিল না। কোনো কোনো রাষ্ট্র এর বিরোধিতাও করতে পারে। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ মিশনগুলো জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয়টি ৪৬ বছর আগের ঘটনা। এ সময়ের মধ্যে বিশ্ব রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে পরিস্থিতির বদল হয়েছে। বিশ্বে নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্ব এসেছে। তাই সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের পাশাপাশি সংসদ সদস্যদেরও বিষয়টি জানানোর প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য একাত্তরে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়কে অগ্রাধিকার হিসেবে নেওয়া হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। জানা যায়, বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে প্রথমবারের মতো গণহত্যা দিবস পালনের জন্য বিভিন্ন ধরনের তথ্য-উপাত্ত ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। গত সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। এর আগে ১১ মার্চ গণহত্যা দিবস ঘোষণার প্রস্তাব জাতীয় সংসদে পাস হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর