শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

আগুনে গুরুত্বপূর্ণ নথি পোড়েনি, বাংলাদেশ ব্যাংকের জিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগুনে গুরুত্বপূর্ণ নথি পোড়েনি, বাংলাদেশ ব্যাংকের জিডি

বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুনের ঘটনায় মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। গতকাল সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম-পরিচালক নুরুল হক ওই জিডি করেন। জিডিতে আগুন লাগার ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বা কীভাবে আগুন লেগেছে তা উল্লেখ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান ঢাকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেছেন, তিন দিনের মধ্যেই তারা তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারবেন। আগুন ‘সাধারণত’ বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে লাগে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আগুন কীভাবে লেগেছে বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত তা তদন্ত শেষে বলা যাবে। এদিকে, আগুনের পর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসায় বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে ফায়ার সার্ভিস সূত্র বলছে, ১৪ তলার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পুড়েছে। কিছু ফাইলপত্র পুড়ে গেছে। ইউপিএস থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তেমন একটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এবং শট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে জানিয়েছেন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামান। গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন। কাল সাড়ে ১০টার দিকে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ব্যাংকের ভিতরে প্রবেশ করেন, সোয়া ১১টার দিকে আবার বেরিয়ে যান। বেরিয়ে যাওয়ার সময় আহমেদ জামান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তদন্তের জন্য এসেছিলাম। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কেন আগুন লেগেছে তা খতিয়ে দেখছি। ২৮ তারিখের মধ্যে আমাদের প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। পরে তিনি বলেন, শটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। আর এই সূত্রপাত জিএমের রুমে ইউপিএস বা অন্য কিছু থেকে। গত বছর রিজার্ভ চুরির ঘটনার পর আগুন লাগার বিষয়ে আবারও সমালোচনায় প্রশ্নবিদ্ধ বাংলাদেশ ব্যাংক। এ দুটি ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক আছে কিনা তা নিয়েও চলছে আলোচনা। উভয় ঘটনার মধ্যে একটি সাদৃশ্য এ প্রশ্নটিকে আরও জোরালো করেছে, আর তা হচ্ছে গত বছর রিজার্ভ চুরি হয়েছিল ৩ দিনের ছুটির ফাঁকে, এবারও আগুন লাগার ঘটনার পরে রয়েছে তিন দিনের ছুটি। দুটি ঘটনা কাকতালীয় নাকি উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক আছে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রের কি পয়েন্ট ইন্সটলেশন (কেপিআই)। এ ভবনে হঠাৎ করে আগুন লাগার ঘটনা স্বাভাবিক নয়। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগের জিএমের কক্ষ থেকে আগুন লাগার বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে। যে দুই ফ্লোরে আগুন লেগেছে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। কারণ ১৪ তলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ। এ বিভাগ দেশের ব্যাংকিং খাতের ঋণসংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ, নজরদারি এবং নীতিনির্ধারণী কাজ করে। দেশের কোনো গ্রাহক ঋণ খেলাপি হলে তার তথ্য এখানে থাকে। পাশাপাশি ঋণ পুনর্গঠন, পুনঃতফসিল এবং ঋণ খেলাপিদের মামলা, শেয়ারবাজার নজরদারিসহ সবকিছু এ বিভাগ দেখাশোনা করে। ফলে এ বিভাগের এসব নথি পুড়ে গেলে ঋণ খেলাপি ও অপরাধীরা আড়ালে থেকে যাবে। আর ১৩ তলায় বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ। বিদেশের সঙ্গে সব লেনদেনের বিষয়টি এ শাখা থেকে নজরদারি করা হয়। কোনো দেশের বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা ছাড় করার অনুমোদন, দেশের বাইরে কী পরিমাণ মুদ্রা রয়েছে, কারা দেশের বাইরে মুদ্রা নিয়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের তথ্যও এখানে থাকে। ফলে দেশের ভিতরে এবং বাইরের মুদ্রাবাজারটি এ দুই বিভাগ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের ১৪ তলার একটি কক্ষে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ১২টি ইউনিটের সাহায্যে এক ঘণ্টার চেষ্টায় রাত সাড়ে ১০ টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বাংলাদেশে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৩০ তলা ওই ভবনের ১৪ তলায় বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

সর্বশেষ খবর