শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

দেশকে মেধাশূন্য করার নিশানা ছিল ওদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশকে মেধাশূন্য করার নিশানা ছিল ওদের

স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের উন্নয়ন স্মরণ করলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। গতকাল জয় তার ভেরিফাই করা ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন; যা বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো। তিনি লিখেছেন, ‘এ মাসে স্বাধীনতার ৪৬ বছর উদ্যাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে স্বাধীনতার লড়াইয়ে নামতে আহ্বান জানান। তার পরের নয় মাস রীতিমতো দুঃস্বপ্নের মধ্যে যেতে হয় বাংলাদেশকে। নির্বিচার নৃশংসতা ও যুদ্ধাপরাধে লিপ্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে সংঘটিত এক গণহত্যার শিকার হয় ৩০ লক্ষ মানুষ। সদ্যোজাত রাষ্ট্রটিকে মেধাশূন্য করতেই তারা নিশানা করেছিল বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক, শিল্পী এবং অন্যান্য উচ্চশিক্ষিত বাঙালিদের। অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই আর ভারতীয় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করে। আমার নানা শেখ মুজিব বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রায় কেউই আশা করেনি এই সদ্য স্বাধীন দেশটি টিকে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র তো এর স্বাধীনতারই বিপক্ষে ছিল।’ তিনি লিখেছেন, “১৯৭৫ সালে সরকারের বিরুদ্ধে এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে আর তার নেতারা আমার নানাবাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে এবং আমার পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে হত্যা করে। এর ধারাবাহিকতায় পরের বছরগুলো নারকীয়তার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। সেসব ছিল অভ্যুত্থান এবং স্বৈরাচারিতা, সামরিক শাসন, দুর্নীতি, দারিদ্র্য এবং অসংখ্য সুযোগ নষ্ট করার বছর। মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে অভিহিত করলেন ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে।” জীব ওয়াজেদ জয় আরও লিখেছেন, ‘১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন আমার মা, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। আর তিনি তার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে সঙ্গী করে কার্যকর কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করলেন যাতে বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়ায়। কিন্তু তাকে প্রতিটা ইঞ্চি জায়গার জন্য লড়তে হয়েছে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়ার সঙ্গে যিনি বিরোধী দল বিএনপির প্রধান, যারা ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল। তবে জনগণের মধ্যে আওয়ামী লীগ তাদের জনপ্রিয়তা বজায় রাখল, এতই জনপ্রিয় যে বিএনপির গাত্রদাহ শুরু হলো। ২০০৪ সালে খালেদা জিয়ার ছেলের পরিকল্পনা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের এক প্রতিবাদ সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হন এবং আহত হন আমার মা। হত্যা এবং ষড়যন্ত্রের চর্চায় অভ্যস্ত বিএনপির রাজনীতির পতনের শুরু হয় তখন থেকেই। ২০০৯ সালে এক ভূমিধস বিজয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা এবং ২০১৪ সালে পুনর্নির্বাচিত হলেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি যখন হরতাল আর জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি করছে, আওয়ামী লীগ তখন ব্যস্ত থেকেছে দেশটাকে আরও ভালোভাবে গড়ার কাজে।’ জয় স্ট্যাটাসে আরও লিখেন, ‘২০০৯ সাল থেকে দেশে দারিদ্র্যের হার শতকরা ৪০ ভাগ থেকে ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। তিন কোটি মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। দেশের গড় প্রবৃদ্ধির হার ১০৩ বিলিয়ন ডলার থেকে দ্বিগুণের বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে ২৫০ বিলিয়ন ডলার। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই হারে শুরুতে মূল ভূমিকা রেখেছে তৈরি পোশাক খাত...। রপ্তানি বার্ষিক ১৬ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে বার্ষিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে, যার কৃতিত্ব মেয়েদের জন্য সরকারি বৃত্তি দেওয়ার কর্মসূচির। নির্ধারিত সময়ের আগেই বাংলাদেশ জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া মিলেনিয়াম উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বেশ কয়েকটি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এতই চমকপ্রদ ছিল এই অগ্রগতি যে জাতিসংঘ তাদের পর্যায়ক্রমিক কার্যকর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা স্ট্যাটাসে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনী খামারের উদ্যোগে প্রান্তিক নারীরা উদ্যোক্তা হয়েছেন এবং ঘরে বসে আয়ের সুযোগ পেয়েছেন যা তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সামাজিক মর্যাদা বাড়িয়েছে। প্রায় ২০ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার প্রথম মেয়াদে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নেওয়া একটি কর্মসূচি ১ লাখ ১০ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসিত হতে সাহায্য করেছে। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক মর্যাদা সূচকে এক দাগ পদোন্নতি দিয়েছে নিম্নমধ্য আয়ের বন্ধনীতে। ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের উচ্চমধ্য আয়ের বন্ধনীতে যুক্ত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। তলাবিহীন ঝুড়ির সেই সময় পেরিয়ে বাংলাদেশ এখন এই অঞ্চলের এবং বিশ্বজুড়ে দেশগুলোর কাছে উন্নয়নের এক রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসন্ন স্বাধীনতা দিবসে আমাদের স্মরণ করতে হবে কীভাবে এত অল্প সময়ে এতটা পথ পাড়ি দিয়েছে আমাদের দেশ।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর