রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

রুদ্ধশ্বাস আতঙ্কের রাত-দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিলেটের আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানার ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন আশপাশের সাধারণ মানুষ। আস্তানায় রুদ্ধশ্বাস অভিযানের পর তার পাশেই আরেকটি আত্মঘাতী হামলার ঘটনায় এ আতঙ্কের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। সিলেট মহানগরীর দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী এলাকায় জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলের ২০০ গজ সামনে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে দ্বিতীয় হামলার ঘটনা ঘটে। ফলে পুরো সিলেটে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। উৎকণ্ঠিত সেখানকার বাসিন্দারা। জানা গেছে, জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলে অভিযান চলাকালে সেখানে দফায় দফায় গুলি আর বিস্ফোরণের শব্দ হয়। একপর‌্যায়ে বিস্ফোরণে বোমার স্প্লিন্টারে শিবুল মালাকার (২৭) নামে এক ব্যক্তি আহত হন। তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযান চলাকালে আবদুল বাসেদ নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহ, আমরা অনেক দূরে থাকলেও বেশ ভয়ের মধ্যে চলছি। সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রথমে ওই বাড়িতে আটকে পড়া পরিবারগুলোকে বের করে আনার ওপর জোর দিয়েছেন। এরপর তারা নিচতলায় জঙ্গিদের অবস্থানে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু জঙ্গিরা আস্তানা ছেড়ে না গিয়ে উল্টো প্রতিহতের চেষ্টা করে। সে সময় কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এতে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। শাহানা আক্তার নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, তারা আতিয়া মহলেই থাকতেন। পাঁচতলা ওই ভবনটির দ্বিতীয় তলায় তাদের বাসা। একতলা নিচেই ছিল জঙ্গি আস্তানা। যার কারণে অন্যদের থেকে একটু বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবার ভোররাতে বিকট শব্দে ঘুম ভাঙার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। পরে পুলিশ হ্যান্ডমাইকে ভবনে জঙ্গি আস্তানার কথা জানিয়ে সবাইকে নিরাপদে থাকতে নির্দেশনা দেয়।’ আতঙ্কের মধ্যে ৩০ ঘণ্টার বেশি অবরুদ্ধ থাকার পর সেনা অভিযানে উদ্ধার হয়ে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন বলে মনে করেন তিনি। একই ভবনের পঞ্চমতলার বাসিন্দা উজ্জ্বল চক্রবর্তী জানান, সকালে হঠাৎ বোমার বিকট শব্দে ঘুম ভাঙার পরই জানতে পারি ভবনে জঙ্গি আছে। বিদ্যুৎ-গ্যাসবিহীন বাসায় প্রায় দুই দিন অবরুদ্ধ ছিলাম। অবরুদ্ধদের স্বজনরাও বাইরে থেকে প্রিয়জনদের ফিরে পেতে আর্তনাদ করতে থাকেন। সাফিয়া বেগম নামে এক নারী বিলাপ করে বলতে থাকেন, ‘আমার বাইচ্চাটারে আইন্না দিলাও। আমার নাতিন আইন্না দিলাও।’ চোখে-মুখে অসহায়ত্বের চিত্র ফুটে ওঠে সাফিয়া বেগমের। উদ্ধারের আগে স্বজনদের ফিরে পাবেন কি-না সে শঙ্কায় ছিলেন তিনি।

সর্বশেষ খবর