রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

যেভাবে উদ্ধার ৭৮ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

শুক্রবার সকাল ৭টা। সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী পাঠানপাড়ার পাঁচতলা ‘আতিয়া মহল’। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ঘুম ভাঙে ভবনের বাসিন্দাদের। তড়িঘড়ি করে ঘুম থেকে উঠে নিচের দিকে তাকিয়ে সবার চোখ ছানাবড়া। নিচে পুলিশ আর র‌্যাবে গিজগিজ করছে। ভয়ানক খারাপ কিছু ঘটেছে—আতিয়া মহলের বাসিন্দাদের মনে এমন শঙ্কাই দেখা দেয়। কিছুক্ষণ পরই টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল আর নিচে পুলিশের হাঁকডাকে তারা বুঝে যান, আতিয়া মহলে আছে জঙ্গিদের আস্তানা। এরপর শুরু হয় তাদের শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা। টানা প্রায় ৩০ ঘণ্টা ‘বন্দিদশায়’ থাকার পর গতকাল সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোদের অভিযানে মুক্ত হন তারা। ফেলেন স্বস্তির নিঃশ্বাস। শিববাড়ী পাঠানপাড়ার আতিয়া মহলের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে আস্তানা গেড়েছে সংগঠিত ও শক্তিশালী জঙ্গিচক্র। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে ওই ভবন ঘেরাও করে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। ওই ভবনে মোট ৩০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এসব ফ্ল্যাটে একটিতে আস্তানা জঙ্গিদের। বাকি ২৯টিতে সমানসংখ্যক পরিবারের বসবাস। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আতিয়া মহল ঘেরাওয়ের পর কার্যত বন্দিদশার মধ্যে পড়েন এই ২৯ পরিবারের ৭৮ জন। ভবনের নিচতলায় জঙ্গিদের আস্তানা থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব ব্যক্তিকে উদ্ধারের ব্যবস্থাও নিতে পারছিল না। ফলে দরজা-জানালা বন্ধ করে, গ্যাস ও বিদ্যুত্হীন অবস্থায় আতঙ্ক আর উদ্বেগের মধ্যে সময় কাটছিল তাদের। মোবাইলের শেষ চার্জটুকুও ফুরিয়ে যাওয়ায় বাইরের স্বজনদের সঙ্গেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাদের যোগাযোগ। ভয় আর আতঙ্কে অনেক বাসিন্দাই বাথরুমে, কেউবা খাটের নিচে আশ্রয় নেন। একেকটা মুহূর্ত তাদের কাছে অনেক দীর্ঘ মনে হচ্ছিল তখন। গতকাল সকাল ৮টার দিকে আতিয়া মহলে আসেন সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোর বেশ কিছুসংখ্যক সদস্য। সকাল সোয়া ৯টা থেকে আতিয়া মহলে অভিযান শুরু করেন তারা। প্রথমেই তারা বন্দিদশায় থাকা ভবনের ২৯টি ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে আনার কাজ শুরু করেন। সেনা সদর দপ্তরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল হাসান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল সব বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে আনার। আমরা প্রথমেই এখানকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে আনার কাজ শুরু করি। আতিয়া মহলের ছাদের ঘর থেকে বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরক ছড়িয়ে ছিল। ফলে বাসিন্দাদের উদ্ধারে কিছুটা সময় লাগে। শেষ পর্যন্ত কোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা ছাড়াই ৭৮ ব্যক্তিকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে সক্ষম হন প্যারা-কমান্ডোরা।’

উদ্ধার হওয়াদের স্বস্তি : সিলেট নগরীর টিলাগড়ে টেইলার্সের ব্যবসা করেন শামীমা ইয়াসমিন। এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্বামীসহ আতিয়া মহলে ভাড়া থাকেন তিনি। আটকা পড়া অবস্থা থেকে উদ্ধার হওয়ার পর শামীমা বলেন, ‘মনে হচ্ছে নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছি। ভয়ে বাচ্চাদের খাটের নিয়ে শুইয়ে রেখেছি। আর আমরা স্বামী-স্ত্রী আতঙ্কে সারা রাত জেগে থেকেছি।’ নিপা বেগম নামের আরেক গৃহিণী দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে আতিয়া মহলের তৃতীয় তলায় থাকেন। উদ্ধার পাওয়ার পর তিনি বলেন, ‘ভেতরে আটকা পড়া অবস্থায় মনে হচ্ছিল, বাইরে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে বিস্ফোরণের পর ভয় পেয়ে যাই। নিচে নামতে গেলে পুলিশ দরজা-জানালা বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান করতে বলে। এরপর জঙ্গি থাকার বিষয়টি টের পাই।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর